২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:২৩:০৪ পূর্বাহ্ন


ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাদ পড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ
ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাদ পড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ ছবি: সংগৃহীত


২০২২ সালে যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিতে হয় দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখনই শঙ্কার শুরু। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের মৃত্যুর খবরটাই হয়ত ঘটা করে জানান দিলো এবার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটের লজ্জার হারে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে আসরের প্রথম দুবারের চ্যাম্পিয়নরা।

বাছাই পর্বের গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারের পরই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপের মূল পর্বের আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায়। জায়গা পেতে সুপার সিক্সের তিন ম্যাচেই জিততে তো হতোই, অন্যদলগুলোকেও হারাতে হতো পয়েন্ট। তবে নিজেদের কবর খোঁড়ার দায়িত্বটা অন্যের হাতে তুলে দেয়নি শাই হোপের দল। প্রথমবারের মতো হেরেছে আইসিসির সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।

বাছাই পর্ব থেকে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এমন বিদায় বেদনাদায়ক হলেও একেবারে হতবাক হওয়ার উপায়ও নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পারফরম্যান্সেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। ২০১৬ সালে শেষবারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই উল্টোপথে হাঁটছে শাই হোপ-নিকলাস পুরানরা। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই আসরেই তারা শেষ করেছে শুধু বাংলাদেশের ওপরে থেকে। সুযোগ পায়নি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ২০১৭ সালের আসরে। সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দশ দলের মধ্যে হয়েছে নবম। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শক্তিশালী দল নিয়ে গিয়েও সুপার টুয়েলভে মাত্র একটি জয় পেয়েছিল তারা।

এরপরও অন্তত বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের দেখা যাবে, এমন আশাই করেছিল সমর্থকরা। সে আশায়ও গুড়েবালি। তুলনামূলক ছোটদল -জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও যে জিততে পারেনি। ক্যারিবিয়ানদের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পেছনে বোর্ডের  অবহেলা যেমন আছে, তেমনি দায় আছে খেলোয়াড়দের। আবার ভাগ্যও কিছুটা বিরূপ ছিল বাছাইপর্বে। আছে আরও কিছু কারণ। সে সবের অনুসন্ধান করা যাক -

প্রস্তুতির ঘাটতি: বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রস্তুতি নিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ অথচ ক্যারিবিয়ানরা সেই সিরিজ খেলেছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে। সেই সিরিজ আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দলের মধ্যেও ছিল ব্যাপক পার্থক্য। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দলে থাকা ছয়জন ছিলই না সে সিরিজে। আইপিএলে খেলা জেসন হোল্ডার, রোভমান পাওয়েল, আকিল হোসেন, আলজারি জোসেফরা সেই সিরিজে বিশ্রাম পেয়েছিলেন। এদিকে কোচ হিসেবে নতুন যোগ দেওয়া ড্যারেন স্যামির সঙ্গে তাদের  প্রথম সাক্ষাতের সুযোগই আসে বাছাই পর্বের আগে। দল নিয়ে ঠিকঠাক কাজ করার সময়ই পাননি স্যামি, তাই জমে ওঠেনি দলের সঙ্গে কোচের রসায়নও।

চোট ও অসুস্থতা: চোট ও অসুস্থতাও ভুগিয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। বাছাই পর্বে সেরা দলটি পাননি স্যামি। শামারাহ ব্রুকসের অসুস্থতার কারণে জনসন চার্লসকে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে হয়েছে তিন নম্বরে। সেখানে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন চার্লস। এরপর দলে ফিরে ব্রুকসও পারেননি ব্যর্থতা থেকে দলকে মুক্তি দিতে। চোটের কারণে একমাত্র লেগ স্পিনার ইয়ানিক ক্যারিয়াকেও পায়নি তারা। বাছাই পর্বে লেগ স্পিনারদের সফলতাই বলে দিচ্ছে তার অনুপস্থিতি কতটা পিছিয়ে দিয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। শ্রীলঙ্কার ওয়ান্নিদু হাসারাঙ্গা নিয়েছেন ২০ উইকেট। উইন্ডিজকে হারানো স্কটিশ লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রেভিসও পেয়েছেন সফলতা। শেষ তিন ম্যাচেই তার শিকার ১১টি।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সুপার ওভার ব্যর্থতা: নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৩৭৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েও নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। লোগান ফন ভিকের শেষের দিকের ঝড়ে ম্যাচ টাই করে সুপার ওভারে নিয়ে যায় ডাচরা। ১৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলার পথে হারারের মাঠের লেগ সাইডটাই বেছে নিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। এরপরও সুপার ওভারে বল করার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেন প্যাভিলিয়ন এন্ডকেই বেছে নিলো তা এক রহস্য। ক্যারিবিয়ানদের এমন হঠকরি সিদ্ধান্ত কাজে লাগায় ফন ভিক। জেসন হোল্ডার প্রথম দুই বলেই ফুলটস দেওয়ার পর বাকি বলেও আর খুঁজে পাননি লাইন লেন্থ। লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারি কাজে লাগিয়ে ফন ভিক তুলে নেন ৩০ রান। ম্যাচ কার্যত সেখানেই শেষ।

ক্যাচ মিসের মহড়া: বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাচ ছেড়েছে ১০টি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারা ম্যাচে দুবার তারা ফেলেছে সিকান্দার রাজার ক্যাচ। ব্যক্তিগত ১ ও ৩ রানে রাজার ক্যাচ ছাড়ার পর তিনি খেলেন ৫৮বলে ৬৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস। সে ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানো আরেক জিম্বাবুইয়ান রায়ান বার্লের ক্যাচও ছাড়ে তারা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারা ম্যাচেও ব্রেন্ডন ম্যাকমুলানের ক্যাচ ছেড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা। ব্যক্তিগত ২১ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার, কিন্তু সেই ক্যাচ নিতে পারেননি কাইল মেয়ার্স।

পাওয়েলের ব্যর্থতা: সহঅধিনায়ক রোভমান পাওয়েলের  কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের, কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি তিনি। প্রথম তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ০, ২৯ ও ১ রান। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্যকে বেঞ্চে বসাতে বাধ্য হয় ক্যারিবিয়ান ম্যানেজমেন্ট।

জাতীয় দলের প্রতি নিবেদনের অভাব: বাকি দলগুলোর সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় তফাতের জায়গা হলো - ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো একক দেশ নয়। ক্যারিবিয়ান সাগরের কিছু আলদা আলদা দ্বীপরাষ্ট্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে ক্রিকেটে বিভিন্ন আসরে অংশ নিয়ে থাকে। তাই অন্যদের মতো দেশপ্রেমের বিষয়টা অনুপস্থিত এখানে। সেই সঙ্গে তাদের ক্রিকেট বোর্ডের নানা অবহেলা তো আছেই। বেতন নিয়ে অসন্তোষের প্রেক্ষিতে খেলোয়াড়দের ধর্মঘাটের ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে সেখানে। তাই খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে খেলা নিয়ে খুব একটা আবেগও কাজ করে না। ঘাটতি থেকে যায় নিবেদনে। জাতীয় দলে খেলার থেকে তারা আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যে কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাতানো অনেক তারকাকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখাও যায় না।