২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৬:২২:৫৫ অপরাহ্ন


গোদাগাড়ীতে মাদককারবারিদের হামলায় চার পুলিশ আহত, নারীসহ ৬ জন গ্রেফতার
গোদাগাড়ী প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৪
গোদাগাড়ীতে মাদককারবারিদের হামলায় চার পুলিশ আহত, নারীসহ ৬ জন গ্রেফতার গোদাগাড়ীতে মাদককারবারিদের হামলায় চার পুলিশ আহত, নারীসহ ৬ জন গ্রেফতার


গোদাগাড়ীতে মাদক উদ্ধারের অভিযানে গিয়ে মাদককারবারিদের দুই দফা হামলায় থানার চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এঘটনায় নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, আহতদের মধ্যে কনস্টেবল মাহবুবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাহবুবের মাথা ফেটে গেলে হাসপাতালে ভর্তির পর ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে। মাহবুবের একটি হাতও ভেঙে গেছে। আহত এসআই আতিকুর রহমানসহ অপর তিন পুলিশকে উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বারীনগর ও ময়নারটেক এলাকাসহ চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে।

এদিকে পুলিশের দাবি, শুক্রবার বিকালে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামে মাদক উদ্ধারে গেলে সংঘবদ্ধ মাদককারবারি দলের নেতা তোজাম্মেল মেম্বারের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। গ্রামবাসী চার পুলিশকে চারদিক থেকে ঘেরাও দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। রাতভর অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে এলাকাবাসীর দাবি, মাদক উদ্ধারের নামে পুলিশের ৪ সদস্যের দলটি সাদা পোশাকে বারীনগর গ্রামের রফিকের বাড়িতে আসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রফিক পালায়। তবে মাদক না পেলেও পুলিশ রফিকের ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা প্রতিবাদ করলে গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পদ্মার চরাঞ্চলের বারীনগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ দুই নারীসহ মোট ছয়জনকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে ১৯ বোতল ফেনসিডিল। পুলিশের ওপর হামলা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোদাগাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে।

পুলিশ বলছে আটককৃতরা মাদককারবারি। এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে এসআই আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে গোদাগাড়ী থানাপুলিশের চার সদস্যের একটি দল সাদা পোশাকে পদ্মা নদীর পশ্চিমপাড়ের সীমান্তবর্তী গ্রাম বারীনগরে যায় মাদকবিরোধী অভিযানে। এ সময় একজন সোর্সের সহায়তায় বারীনগর গ্রামের রফিকের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

এলাকাবাসীর দাবি রফিকও পুলিশের একজন সোর্স। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রফিক পালিয়ে গেলে পুলিশ তার ভাইকে আটক করে। এ সময় রফিক’র ভাইয়ের ৮ বছরের একটি শিশু তার বাবাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য পুলিশের পা ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় একজন পুলিশ ওই শিশুটিকে লাথি দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের দলটিকে ঘেরাও করেন। তারা পুলিশের কাছে জানতে চান কেন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উদ্ধার করা মাদক কোথায় সেটিও গ্রামবাসী দেখাতে বলে পুলিশকে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রামবাসী পুলিশ দলটিকে ঘেরাও করে তাদের কাছে জানতে চাইছিলেন মাদক না পাওয়া গেলে কেন তারা একজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তোজাম্মেল মেম্বারের নেতৃত্বে গ্রামবাসী পুলিশের দলটিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এসআই আতিকসহ তিন পুলিশ, কনস্টেবল মাহবুবকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী কনস্টেবল মাহবুবকে বেধড়ক পিটুনি দিলে তার মাথা ফেটে যায়। ভেঙে যায় একটি হাতও।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের বিশেষ-শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ-সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী জয়ে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে গোদাগাড়ী থানায়। একটি মাদকের মামলা ও অপরটি পুলিশের ওপর হামলার মামলা। মাদকের মামলায় দুজন ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ২৪জনের নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে। নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, আসামীদেরকে আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আটককৃতরা হচ্ছে বারীনগর গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে আলামিন (২৩),মাইনুল ছেলে মিলন (২৩), মো. মুনছুর আলী স্ত্রী রাকিবা (৩০), সারুল ছেলে কবিরুল ইসলাম।