স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কোনো প্রতিহিংসা, সহিংসতা, নৈরাজ্য, হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে আর রাজনীতির নামে জ্বালাও, পোড়াও, বোমাবাজি, হত্যা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী, কথায় কথায় মিথ্যাচার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে বেড়ায় তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না।
বৃহস্পতিবার ঈদের দিন বিকালে লাকসামে নিহত ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার অনিকের জানাজা অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
প্রত্যেক ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম ও মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, যুবদল, ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তারা এসব অস্ত্র কোথায় থেকে পায়। কারা এদের অস্ত্র সরবরাহ করায়।এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তিনি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) সূক্ষ্ম তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি উদঘাটনসহ আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এসময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার অনিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পাশাপাশি তিনি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে শত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
জানাজা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিহত ছাত্রলীগ নেতার বাবা মো. মনির হোসেন, কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবদুল মান্নান, লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. ইউনূছ ভূঁঞা, কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবু তাহের, লাকসাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তাবারক উল্লাহ কায়েস, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী, পৌরসভা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম হিরা, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. মাজহারুল ইসলাম শাওন, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সালাউদ্দিন সানী, পৌরসভা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফ খান স্বাধীন, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম তুষার, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক কাউসার আলম প্রমুখ।
বক্তারা অনিক হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারসহ আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
এ সময় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবদুল মান্নান তার বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, ২১ জুন রাতে কুমিল্লার লাকসাম পৌর শহরের দক্ষিণ বাইপাস এলাকায় যুবদলকর্মী সায়মুন রহমান রকি এবং কতিপয় ছাত্রদল কর্মীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতেখার অনিক, ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম সৌরভ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীর আহত হন। এ সময় আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের প্রথমে লাকসামের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অনিকের অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওইদিন রাতেই তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অনিককে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বুধবার রাত সোয়া ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনিকের মতোই বাকি দুজন কুমিল্লা মেডিকেলে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার ইফতেখার অনিক হাসপাতালে আহত থাকায় অবস্থায় তার বাবা মো. মনির হোসেন, ছাত্রদলের নেতা সায়মুন রহমান রকিকে প্রধান আসামি এবং ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।