এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থাভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন অনিশ্চিত মেরিনা খাতুনের। সে এবার কলসনগর মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ছোটবেলায় বাবা মতিউর রহমান তার মা ফাহিমা খাতুনকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। পরে ফাহিমা খাতুনেরও অন্যত্র বিয়ে হলে অভিভাবকহীন মেরিনা বৃদ্ধ নানা নানীর সাথে বসবাস করেন। তার নানা লালপুর উপজেলার কলসনগর গ্রামের পাতান শেখ। পাতান শেখের ছোট্ট একটি টিনের ঘরেই নানা-নানীর সাথে মেরিনার বসবাস। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলাই ভার, সেখানে লেখাপড়া অনেকটা ছেড়া কাথায় শুয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখার মতোই। তবুও অদম্য মেধা ও ইচ্ছা শক্তিকে পুঁজি করেই দারিদ্রতার করাল গ্রাসে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে অন্যের কাছ থেকে বই সংগ্রহ আর অন্ধকার ঘরে কূপির আলো জ্বেলে লেখাপড়া চালিয়ে কলস নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে ও কলসনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সকল বিষয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে সে।
এরপর তার মনোবল আরো বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৯৬ ও ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অদম্য মেধাবী মেরিনা বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। দাঁড়াতে চায় নিজের পায়ে। টিনের ঝুপরি ঘরে পরিবারের ৩ সদস্যের বসবাস হওয়ায় লেখাপড়া করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাটুকু মেলেনা তার। তবুও নিজের অদম্য ইচ্ছা আর নানা নানির ভালোবাসায় লেখাপড়াটা চালিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু আগামী দিনে পড়ালেখার খরচ বহনের ব্যাপারে শংকিত হয়ে পড়েছে পরিবার।
মেরিনা র প্রতিবেশীরা জানায়, ছোটবেলা থেকেই মেরিনা অতি মেধাবী। পিএসসি পরীক্ষাও সে জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলো। সকলের দোয়া ও সহযোগিতা পেলে সে নিশ্চয়ই তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। ঘুচাতে পারবে দারিদ্রতা। মুছিয়ে দিতে পারবে বৃদ্ধ নানা নানীর চোখের পানি।
মেরিনা জানায়, তিন বেলা খাবার জোটানোই নানা নানির পক্ষে কঠিন ব্যাপার। সেখানেতো লেখাপড়ার বিষয়টি বড় কষ্টকর। তবুও নানা নানির স্বপ্ন আমাকে লেখাপড়া করানোর। খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। তবুও লোখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। বড় হয়ে একজন বিসিএস ক্যাডার হবো, এটাই আমার স্বপ্ন। ক্লাস ওয়ান থেকে এখন পর্যন্ত সব ক্লাসেই মেধা তালিকায় প্রথম অবস্থানে থাকে। সবার দোয়া থাকলে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। সাফল্যের ব্যাপারে কলস নগর মহা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জাবেদ আলী জানান, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মেরিনা খাতুন। সে অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান। আরো সুযোগ-সুবিধা পেলে সে অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। আমরা আমাদের কলেজে থাকা অবস্থায় তাকে যথেষ্ট সহযোগীতা করেছি। কিন্তু তার উচ্চ শিক্ষা এখন একটি অনিশ্চিত ব্যাপার। সমাজের বিত্তবানরা যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
রাজশাহীর সময় /এএইচ