ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সময় গুলিতে এক পা হারান রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ইমরান আলি। ডান পা হারিয়ে তিনি বর্তমানে নিজবাড়িতে অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ রেখেছেন।
উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে ইমরান আলি।
ইমরান বলেন, আমি ঢাকায় টপওয়ান নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার সময় মিরপুর-১১ হতে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ মনে হলো আমার পায়ে কেউ যেন ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করল। কিছুক্ষণ পর দেখি পা রক্তে ভিজে গেছে। পরে বুঝতে পারলাম আমার পায়ে গুলি লেগেছে।
তিনি বলেন, আমার সামনে আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। আমি ১৯ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই ঘটনার শিকার হই। মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা আমাকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন মিরপুরের অশোক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পঙ্গুতে ৩০ দিন চিকিৎসা চলে। অবশেষে আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। গত ২০ দিন আগে ইমরানকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তার বাবা সোহরাব আলি বলেন, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল ইমরান। এমন পরিস্থিতিতে আর সংসার চলছে না। তারপর অর্থাভাবে তার চিকিৎসাও বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। এতদিন ধার-দেনা করে ছেলের চিকিৎসা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে ও একটি মাত্র ছেলে হলো ইমরান। আমার বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। মোল্লাপাড়া বাজারে আমার ছোট একটি পানের দোকান রয়েছে। ছেলের চাকরি আর আমার পানের দোকান দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। তারপর ইমরানের এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। এখন আমাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। আমাকে এ পর্যন্ত সরকারি কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ কোনোরকম সাহায্যে সহযোগিতা করেননি। তবে জামায়াতের পক্ষ হতে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন পেয়েছি। আমি ডিসি অফিসে পাঠিয়েছি। সরকার বর্তমানে শহিদের তালিকা করছে। পরবর্তীতে আহতদের তালিকা করার সময় বিষয়টি দেখা যাবে।