২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:০২:৫৬ অপরাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর প্রতিষ্ঠাতার ভাই নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০১-২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর প্রতিষ্ঠাতার ভাই নিহত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর প্রতিষ্ঠাতার ভাই নিহত


যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের’ অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিস কুলার্সের এক চাচাতো ভাই কিনান অ্যান্ডারসন লস এঞ্জেলেসে পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ৩১ বছর বয়সি অ্যান্ডারসনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বারবার টেইজার গান ব্যবহার করেছে। পেশায় শিক্ষক অ্যান্ডারসন তাতে বাধা দেয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর সান্তা মনিকা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

লস এঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি) ৩ জানুয়ারি অ্যান্ডারসন ও পুলিশের মধ্যে কী কী হয়েছিল, সে সংক্রান্ত বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এতে অ্যান্ডারসনকে সাহায্য চেয়ে কাতর অনুরোধ করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েডের মতো মারার চেষ্টা করছে।

২০২০ সালের মে মাসে মিনেসোটার মিনেপোলিসে এক পুলিশ সদস্যের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বজুড়েও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল।

অ্যান্ডারসনের পাশাপাশি জানুয়ারির শুরুতে লস এঞ্জেলেস পুলিশের হাতে আরও এক কৃষ্ণাঙ্গ ও এক বাদামি বর্ণের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। টাকার স্মিথ ও অস্কার সানচেজ নামে ওই দুই ব্যক্তি দুজনই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

লস এঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এসব ঘটনাকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’বলে অভিহিত করেছেন। পুলিশ বলেছে, তারা এ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।

বিবিসি জানিয়েছে, অ্যান্ডারসন ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকতেন, তিনি লস এঞ্জেলেসে বেড়াতে এসেছিলেন। তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ এখনও জানানো হয়নি।

পুলিশ প্রধান মিশেল মুর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, একটি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ৩ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে লস এঞ্জেলেসের একটি সড়কে যায় পুলিশ।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে পুলিশের নির্দেশনা অনুসরণ করে অ্যান্ডারসন বসেই ছিলেন, কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ আসার পর তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। সেসময় পুলিশ বারবার তাকে থামতে অনুরোধ করেছিল। এরপর পুলিশ পরে তাকে ধরে ফেলে আটকের চেষ্টা করলে তিনি প্রথমে তাদের কথা শোনেন, এক পর্যায়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন এবং ‘দয়া করুন, সাহায্য করুন ’,‘তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েড বানাতে চাইছে’ বলে চিৎকার করতে শুরু করেন।

পুলিশের কাজে বাধা না দিতে বারবার বলার পর এক কর্মকর্তা প্রথমে প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে তার ওপর টেইজার গান ব্যবহার করেন। সেসময় অন্য কর্মকর্তারা তাকে ঝাপটে ধরে ছিল। পরে অ্যান্ডারসনকে অচেতন করতে তার ওপর আরও ৫ সেকেন্ড টেইজার ব্যবহার করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এর ৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় এবং অ্যান্ডারসনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাড়ে চার ঘণ্টা পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে পুলিশের টক্সিলজি প্রতিবেদনে অ্যান্ডারসনের শরীরে গাঁজা ও কোকেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আলাদা একটি প্রতিবেদন দেবে লস এঞ্জেলেস কাউন্টির ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তার কার্যালয়।

অন্যদিকে অ্যান্ডারসনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুলিশের কার্যক্রমে সংস্কারের জন্য আন্দোলন আবারও গতি পাবে বলে মনে হচ্ছে । এই আন্দোলনকারীদের অনেকেই মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনায় অস্ত্রধারী পুলিশ পাঠানো ঠিক নয়।

অ্যান্ডারসনের কাজিন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কুলার্স ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আমার ভাই সাহায্য চেয়েছিল, কিন্তু সে তা পায়নি। সে তার জীবন নিয়ে ভীত হয়ে পড়েছিল। কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলন দেখে সে গত ১০ বছর কাটিয়েছে। সে জানত, এটা কী রকম হয় এবং সে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করল না।

কুলার্স এবং অন্যরা ইতোমধ্যে এই ঘটনার জন্য লস এঞ্জেলেসের পুলিশপ্রধান মুরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

অন্যদিকে মুর বলেছেন, জনস্বার্থে তিনিই অ্যান্ডারসনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ ত্বরান্বিত করেছেন, স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের ফুটেজ প্রকাশিত হতে ৪৫ দিনের মতো সময় লাগে।