২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:৩২:৩১ অপরাহ্ন


নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগির পরিবার : মেয়রের নামে ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহার না করায় পাল্টা ৮ মামলা
পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১২-২০২২
নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগির পরিবার : মেয়রের নামে ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহার না করায় পাল্টা ৮ মামলা নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগির পরিবার : মেয়রের নামে ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহার না করায় পাল্টা ৮ মামলা


রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুন খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহার না করায় উল্টা পৃর্থক ৮টি মামলার খড়গে কোণঠাসা ভুক্তভোগির পরিবার।

ওই ভুক্তভোগি অভিযোগ তুলে বলছেন, মামলা দায়ের পর থেকে মেয়রের লোকজন হুমকি-ধামকির সাথে সার্বক্ষনিক তাদের নজরদারী করছেন। এ বিষয়ে তিনি থানায় একাধিক ডায়েরিভূক্তও করেছেন। তবে বর্তমানে তাদের পুরো পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্রী বলেন, মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পর থেকে তিনি আটক হোন। এরপর তিনি জামিনে বের হয়ে তার সহযোগিদের দিয়ে আমার ও আমার বাবা-মার নামে ১০৭ ধারায় এখন পর্যন্ত ৮ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরো কয়েকটি মামলা করা হবে বলে মেয়রের সহযোগিরা প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিচ্ছে।

ভুক্তভোগি বলেন, তিনি রাজশাহী কলেজের ভূগোল বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী। মেয়র ও তার লোকজনের প্রভাব ও হুমকির কারণে হয়তো আমার লেখাপড়া আর করতে পারবো না। তিনি বলেন, আমি নির্যাতনের শিকার। তার বিচার চাইতে গিয়ে কি আমি বড় ভুল করে ফেলেছি? বিচার চাওয়া কি আমার অপরাধ। আর মেয়র হয়ে অপরাধ করলে তার বিচার চাওয়া যাবে না? তার সকল অপরাধ কি আমাকে ধামাচাপা দিতে হবে। আর আমার উপর কেনো এতো নির্যাতন করা হচ্ছে? আমি মেয়রের কঠোর স্বাস্তি দাবী করছি।

জানা গেছে, মেয়র আল মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্রী ও তার পিতা-মাতার নামে পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর মামলা গুলো দায়ের করেছেন মেয়রের লোকজন। এর মধ্যে তার সম্পর্কের চাচা আতাউর রহমান রাজশাহীর এক্সিকিটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ ১০৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭১০/২০২২। মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্রী ও তার বাবা-মা। একই আদালতে ও একই ধারায় মামলা করেন মেয়রের মামাতো ভাই সাদ্দাম হোসেন। তার মামলা নং-৭০৪/২০২২। অপরটি করেন মেয়রের সহযোগি আব্দুর জব্বার চান্দু। যার মামলা নং-৭১৪/২০২২। সেই সাথে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেবের মোল্লাও বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। যার নং-৭২৬/২০২২ ও ভুক্তভোগিকে তালাক দেয়া স্বামী রবিউল ইসলামকে কৌশলে ম্যানেজ করে আমলী আদালত-১ এ একই ধারায় তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা দায়ের করে। যার নং-৫৬৮/২০২২। আর প্রতিটি মামলায় আলাদা আলাদা হাজির হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এরপর পৌরসভার একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ আরো দুইজন মিলে পৃর্থক তিনটি মামলা আদালতে দায়ের করেছেন।অভিযোগকারীরা বলছেন, মেয়রের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় ওই মেয়ে আমাদের নামে হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা করেছেন। তাই আমরাও ওই মেয়ে ও তার পরিবারের নামে আদালতে পাল্টা পৃর্থক মামলা করেছি।

ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্রীর মা বলেন, আমরা খুবই অসহায়। নিজের কোনো জমিজমা নেই। একমাত্র মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে সরকারের দেওয়া ঘরে বসবাস করি। এর মধ্যে পৌরসভার মেয়র আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে মেয়ের সর্বনাশ করেছে। এর বিচার চাইতে গিয়ে এখন মেয়র মামুনের লোকজন আমাদের নামে একের পর এক হয়রানি ও মিথ্যা মামলা করছে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনও রাতে আমাদের বাড়ির আশে পাশে হোন্ডা নিয়ে অপরিচিত লোকজন ঘুরাঘুরি করে। এখন মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তায় পড়েছি। আতঙ্কে মেয়েটি একা কলেজেও যেতে পারে না। তার সাথে সব জায়গায় আমাকেও যেতে হয়।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া পৌরসভার সদ্য বরখাস্তকৃত মেয়র আল মামুন খান ভুক্তভোগি পরিবারের নামে একাধিক মামলা দায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি জেলে থাকাকালীন সময় ওই মেয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা ও হয়রানীমুলক অভিযোগ করেছেন। সেই সাথে মেয়েটি তাদের জেল জরিমানার হুমকি দিয়ে আসছে। সে কারণে সম্মান রক্ষার্থে হয়তো তারা মেয়েটির পরিবারের নামে উল্টা মামলা করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার সাথে ওই মামলা গুলোর কোনো যোগ সাজস নেই।

উল্লেখ্য, পুঠিয়া পৌর মেয়র সদর এলাকার স্বামী পরিত্যাক্তা এক কলেজ ছাত্রীকে (২৪) চাকুরির প্রলোভনে নিয়মিত ধর্ষণ করত। এক পর্যায়ে তার এই অনৈতিক কাজে ভুক্তভোগী প্রতিবাদ করেন। এতে মেয়রের লোকজন ভুক্তভোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। যার কারণে তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর মেয়রের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৬। তারিখ ০৫-০৯-২০২২ ইং।

অপরদিকে, গত বছরের শুরুতে দুর্গাপুর উপজেলার একজন হাসপাতালের সেবিকাকে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে ওই সেবিকা সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি করেন। এতে মেয়রের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে গত বছর ১১ এপ্রিল ওই সেবিকাকে মেয়রের ব্যক্তিগত অফিসে তুলে এনে শারীরিক নির্যাতন করে। সে সময় খবর পেয়ে পুঠিয়া থানা পুলিশ ওই সেবিকাকে মেয়রের চেম্বার থেকে উদ্ধার করেন। পরে ওই রাতেই ভুক্তভোগি সেবিকা বাদী হয়ে মেয়রকে আসামী করে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৩ তারিখ ১১-০৪-২০২১ ইং। এ ঘটনার কিছুদিন পর আ'লীগের একজন শীর্ষ নেতার তদবিরে সেবিকা ধর্ষণ মামলার বিষয়টি রফাদফা করা হয়েছিল।