২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১১:০১:০২ অপরাহ্ন


জুমার প্রথম খুতবা : দরুদ শরিফের ফজিলত ও উপকারিতা
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১২-২০২২
জুমার প্রথম খুতবা : দরুদ শরিফের ফজিলত ও উপকারিতা ফাইল ফটো


আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ২ ডিসেম্বর ২০২২ ইংরেজি, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯ বাংলা, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৪ হিজরি। আজ জমাদিউল আউয়াল মাসের প্রথম জুমা। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- দরুদ শরিফের ফজিলত ও উপকারিতা। এ বিষয়টি কোরআন সুন্নাহর বর্ণনায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

আলহামদুলিল্লাহ! সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবিব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়তে স্বয়ং মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন এভাবে-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবিজির প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাঁর ফেরেশতাগণ নবিজির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবিজির জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং যথাযথ শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাও।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৫৬)

দরুদ ও সালাম ফজিলত এবং উপকারিতা

প্রিয় মুসল্লিগণ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হলো দরুদ শরিফ পড়া। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে। তাহলো-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিনে একশত বার এবং জুমআর রাতে একশত বার আমার উপর দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার একশতটি হাজত পূরণ করবেন। এর মধ্যে সত্তরটি হাজত হচ্ছে পরকালীন এবং ত্রিশটি হাজত হচ্ছে ইহলৌকিক। তিনি এর জন্য একজন ফেরেশতা মনোনীত রেখেছেন যিনি আমার কবরে তা পৌছিয়ে দেবেন। যেভাবে তোমাদের কাছে কেউ হাদিয়া নিয়ে যায়। আমার ইন্তেকালের পরের জ্ঞান আমার জীবনকালীন জ্ঞানের মত। যে কেহ আমার উপর দরুদ পাঠ করবে, ফেরেশতা তার নাম ও বংশ পরিচয়সহ আমাকে সংবাদ দিবেন। তারপর আমি একটি উজ্জ্বল বইয়ে তার নাম- ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখব।’ (বায়হাকি)

কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। দরুদের বহু ফজিলত ও উপকারিতা থেকে কিছু এখানে তুলে ধরা হলো-

১. অনুগ্রহ, ক্ষমা ও মর্যাদা বৃদ্ধির আমল

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشراً

‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম ১/১৬৬; তিরমিজি ১/১০১)

অন্য হাদিসে আছে, হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

من صلى علي صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات، وحطت عنه عشر خطيئات، ورفعت له عشر درجات.

‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বুলন্দ হবে।(নাসাঈ ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ২/৪৩)

অন্য বর্ণনায়, হজরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হবে।’ (তবারানি ২২/৫১৩)

২. ফেরেশতারা মাগফেরাতের দোয়া করেন

হজরত আমের ইবনে রবিআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি-

من صلى علي صلاة، لم تزل الملائكة تصلي عليه ما صلى علي، فليقل عبد من ذلك أو ليكثر

‘আমার উপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৬/৪০; ইবনে মাজাহ ৯০৭)

৩. দরুদ পাঠকারীর জন্য শাফায়াত অবধারিত

হজরত রুওয়াইফি ইবনে ছাবিত আলআনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে। (তবারানি ৫/৪৪৮১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৫৪)

৪. কিয়ামতের দিন নবীজীর সবচেয়ে কাছাকাছি হবে

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

أولى الناس بي يوم القيامة أكثرهم علي صلاة

কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে কাছাকাছি হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি ১/১১০)

৫. দোজাহানের সব আশা পূরণ হবে

হজরত উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।

আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো।

আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো।

আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো।

আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসূদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি ২/৭২; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৫)

৬. যে চায় তাকে কোঁচর ভরে দেওয়া হোক

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে চায় আমাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর দরুদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে-

اللهم صل على محمد النبي وأزواجه أمهات المؤمنين وذريته وأهل بيته كما صليت على آل إبراهيم إنك حميد مجيد (আবু দাউদ ১/১৪১)

৭. গরীব পাবে সদকার সওয়াব

হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দোয়ায় বলে-

اللهم صل على محمد عبدك ورسولك، وصل على المؤمنين والمؤمنات، والمسلمين والمسلمات.

এটা তার জন্য যাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে।’ (ইবনে হিববান ৩/১৮৫)

৮. উম্মতের সালাম নবীজীর নিকট পৌঁছানো হয়

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার যমীনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ ১/৪৪১; ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৪; নাসাঈ ১/১৪৩)

৯. দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকবে।’ (তিরমিজি ১/১১০)

আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি দরুদ পড়ার তাওফিক দিন। وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين। আমিন।