মাকে তুষ্ট করতে চাই মানুষের রক্ত। তবে যে কোনও জাতের হলে হবে না, একমাত্র ব্রাহ্মণের রক্তে তুষ্ট হবেন মা। সিদ্ধিলাভের আশায় অমাবস্যার রাতে নরবলির আয়োজন করেই ফেলেছিল দুই তান্ত্রিক। সেই মতো ধরে আনা হয়েছিল ‘চক্রবর্তী’ পদবির যুবককে। তারপর তাঁকে ‘আচ্ছন্ন’ করে হাঁড়িকাঠে চড়ানোর কাজও সারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খাঁড়া তুলে ঘাড়ে কোপ মারতেই আচ্ছন্ন ভাব কেটে যায় যুবকের। উল্টে দুই তান্ত্রিকের মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যেই পুলিশের জালে। অন্যজন পলাতক।
ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ায়। ব্রাহ্মণ যুবকের নাম অমর চক্রবর্তী। তিনি নদিয়ার তাহেরপুর থানার বীরনগর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। আটক তান্ত্রিকের নাম নারায়ণ সরকার, ওরফে নন্দ। সে বীরনগরের জয়পুর রেললাইন পাড়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই তন্ত্র মন্ত্রের চর্চা করে সে। এলাকার অনেকেই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছে যেত। সেই সূত্রেই অমর চক্রবর্তীর সঙ্গে আলাপ হয় নন্দর।
অমরের ভক্তি এবং বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আরও এক তান্ত্রিককে সঙ্গী করে তাঁর মগজধোলাই করতে শুরু করে নন্দ। তাঁকে নন্দ জানায়, অমাবস্যার রাতে বিশেষ পূজোর আয়োজন করা হয়েছে। সেই পুজোয় উপস্থিত থেকে নন্দর নির্দেশ পালন করলেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হবেন অমর। তার কথা মতোই বুধবার রাত ১০টা নাগাদ নন্দর বাড়িতে যান অমর। এরপর তাঁকে নিয়ে ধূপ জঙ্গলে ভেড়া একটি নির্জন পুকুরের কাছে নিয়ে যায় অভিযুক্ত তান্ত্রিক। সে অমরকে নির্দেশ দেয় পুকুরে ডুব দিতে। জানায়, ডুব দিলেই মণিমুক্তোয় ভরা সোনার কলসে পা ঠেকবে। তারপর চোখ বুজে পুকুর থেকে উঠে আসতে হবে।
তার থেকে নির্দেশ পালন করে পুকুরে ডুব দেন অমর। কিন্তু সোনার কলস তো দূর, কিছুই মেলেনি। এরপর পুকুর থেকে উঠে আসেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরে নন্দর সঙ্গী তান্ত্রিক। তাঁকে জোর করে হাঁড়িকাঠে চড়িয়ে ঘাড়ে খাঁড়া দিয়ে এক কোপ বসানো হয়।
ততক্ষণে জ্ঞান ফিরেছে অমরের। রক্তাক্ত অবস্থাতেই কোন মতে সেখান থেকে উঠে পালাতে থাকেন তিনি। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। তাঁরাই অমরকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর ঘাড়ে এবং গলায় মোট ৬০টি সেলাই পড়ে। আপাতত আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই নারায়ণ সরকার নামে ওই তান্ত্রিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তার সঙ্গী পলাতক। শুক্রবার অভিযোগ থেকে রানাঘাটের এজিএম আদালতে তোলা হলে বিচারপতি মনোজিৎ দাশগুপ্ত তাকে আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা নির্দেশ দিয়েছেন।