শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়াদের হাইব্রিড আর কাউয়া বলে বিতাড়িত করা আওয়ামী লীগের জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক,জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আগামী ৪ ডিসেম্বরের দলীয় সভানেত্রীর সমাবেশকে সফল করতেই মূলত এ যৌথ সভার আয়োজন করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় ও মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনো মানুষ যদি শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চাই, নৌকার মিছিলে আসতে চাই-তাকে হাইব্রিড আর কাউয়া বলে বিতাড়িত করা আওয়ামী লীগের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। কোনো মানুষ যদি সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্টের সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিছিলে আমাদের সঙ্গে সাথী হতে চান, আমাদের সঙ্গে আসতে চান এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন। সেই মানুষকে হাইব্রিড বা কাউয়া বলে বিতাড়িত করে বিএনপির শিবিরে ঠেলে দেওয়া, বিএনপির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া, এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ও অবস্থান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’
‘সবাইকে একটি কথা মনে রাখতে হবে— ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য; এসেছে ধ্বংসের বার্তা। ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।’ তাই আমরা এখন ফুল খেলবার দিনে নেই। দেশের বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হলে, দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, শক্তিশালী হতে হবে এবং জনগণকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ —এ কথাটি ব্যক্তি জীবনে চলে। রাজনৈতিক জীবনে ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ করার যারা ষড়যন্ত্র করেন বা স্বপ্ন দেখেন তারা আওয়ামী লীগকে কমিউনিস্ট পার্টিতে রুপান্তরিত করার একটি আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণের ভোট আমাদের দরকার আছে। এ দেশটি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ দিয়ে উন্নত হচ্ছে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী নন; তিনি বাংলার সমস্ত মানুষের নেত্রী।’
আওয়ামী লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করেছি; ছাত্রলীগ করার সময় আমাকে কেউ টাকা দেয়নি, কোনো পারিশ্রমিক দেয়নি। আমার ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দল করে না। নেতাদের প্রটোকল দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে; তার জন্য তাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। এনজিও’র মতো তাকে এক প্যাকেট খাবার দেওয়া হয় না। আজকে আমরা নেতারা এখানে বসে মিটিং করছি; আমরা দুপুরে একটু খাবারও খাব। আমাদের অনেক ছাত্রলীগ করা সহকর্মী বাইরে দাঁড়িয়ে আছে; আমাদের এ মিটিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো তাদের কপালে আমরা একমুঠো ভাতও তুলে দিতে পারবো না। তারা নিজের খেয়ে, বাবার টাকায় ছাত্রলীগ করেন। আমিও ছাত্রলীগ করে আজকের এখানে এসেছি।’
‘আমি স্বপন যদি ৪২ বছর বয়সে; জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ভালোবেসে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করতে পারে; তাহলে কেন চট্টগ্রামের অগণিত ছাত্রলীগ করা, যুবলীগ করা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ করা ছেলে-মেয়েরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আসতে পারবেন না'-যোগ করেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন-এমপি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতার চরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আর কত বড় হবো? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ ফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে; তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে?’ আমার খুব শখ করছিল; আমি ক্ষণিকের অতিথি। হয়তো আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে কাজ করবো; ওয়ার্ডের কাউন্সিল হয় না, মহানগরের কমিটি ঢাকা থেকে হয়। আমারও স্বপ্ন ছিল ইউনিটের কাউন্সিল, ওয়ার্ডের কাউন্সিল করবো। সেখানে ছাত্রলীগ করা তাজাপ্রাণ, যুবলীগ করা তাজাপ্রাণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ করা তাজাপ্রাণ, মহিলা আওয়ামী লীগ করা তাজাপ্রাণ, ত্যাগী নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আশীন হয়ে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সামনের মাসে রোজা, তারপরের মাসে কোরবানের ঈদ, তারপরের মাসে হজ, তারপরের মাসে ওমরা হজ, তারপরের মাসে দূর্গাপূজা, তারপরের মাসে ঈদে মিলদুন্নবী, তারপরের মাসে করোনা-বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে আমার এ উদ্যোগকে অনেকেই ব্যর্থতায় পর্যবশিত করেছেন।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমি কারও পক্ষপাতিত্ব করছি না। ইয়েস-আমি পক্ষপাতিত্ব করি, সেই পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে আমার জননেত্রী শেখ হাসিনার। সেই পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ। কেন পক্ষপাতিত্ব করবো না? রাজনৈতিক কর্মসূচি হবে ৪ ডিসেম্বর। এ কর্মসূচিকে সফল করতে হবে।
পাশাপাশি এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আমাদের সমগ্র চট্টগ্রামে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। এ গণজাগরণ সৃষ্টি করার জন্য একইভাবে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিল চলবে, জেলায় থানা কাউন্সিল চলবে, ইউনিয়ন কাউন্সিল চলবে এবং সবকিছু চলমান থাকবে। সঙ্গে এ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমাদের ৪ ডিসেম্বরের প্রোগ্রামকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করবো। আসছে আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আমরা জনতার মহাসমুদ্র করতে চাই।