রিজিকে বরকত মানুষের জন্য অনেক জরুরি বিষয়। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন, সে হিসেবে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতের পাশাপাশি রিজিকেও বরকত পাননি। বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহ হলো- ‘হালাল রিজিক। তিনি বান্দাকে বিভিন্ন উপায়ে এ রিজিক দিয়ে থাকেন। কী সেসব উপায়?
১. আল্লাহকে ভয় করা: যে যত বেশি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তিকে তত বেশি সহায়তা দান করবেন। তাকে কল্পনাতীতভাবে রিজিক দান করবেন। আল্লাহ বলেন–
وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا - وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ ؕ
‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)
২. আল্লাহর ওপর ভরসা করা: আল্লাহর ওপর ভরসা করলে শুধু রিজিকই নয় বরং মহান আল্লাহ ওই বান্দার সবকিছুর ব্যাপারে যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ বলেন–
وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِکُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرًا
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)
৩. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা: সব সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলে বান্দার সব চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহ পূরণ করে দেবেন। আল্লাহ বলেন–
وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড়ই কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
৪. ঋণ কিংবা সাদকা দেওয়া: যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে খরচ করবে, দান–সাদকা করবে কিংবা অন্যকে উত্তম ঋণ দেবে, তখন আল্লাহ ওই বান্দার রিজিক অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন–
مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یُقۡرِضُ اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا فَیُضٰعِفَهٗ لَهٗۤ اَضۡعَافًا کَثِیۡرَۃً ؕ وَ اللّٰهُ یَقۡبِضُ وَ یَبۡصُۜطُ ۪ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ
‘ এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ; এরপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ–বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সবাই ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
৫. ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আর ক্ষমা প্রার্থনায় আল্লাহ মানুষকে রিজিক দিয়ে থাকেন। হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা এ নসিহত এভাবে করেছেন-
فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا - یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا - وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا
‘অতঃপর (আমি নুহকে) বলেছি, তোমরা তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র (রিজিক উৎপাদনে) বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন–সম্পদ ও সন্তান–সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী–নালা প্রবাহিত করবেন’ (সূরা নুহ : আয়াত ১০–১২)।
৬. আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অন্যতম ইবাদত। এ ইবাদতে শুধু রিজিক বাড়ে এমন নয়, বরং হায়াতও বাড়ে বলে উল্লেখ করেছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে–
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কামনা করে যে তার রিজিক বেড়ে যাক এবং হায়াত (জীবন) দীর্ঘায়িত হোক; সে যেন আত্মীয়তার সুসম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর আমলের মাধ্যমে নিজেদের রিজিককে পবিত্র করার পাশাপাশি বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।