করোনাভাইরাস মহামারিতে গেল বছর ২০২১ সালে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারী এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী রয়েছেন।
শনিবার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা : হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে। ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার বিথি এই সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন।
১০১ শিক্ষার্থীর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ৬২ জন, যা মোট সংখ্যার ৬১.৩৯ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৩ জন বা ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এছাড়াও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১২, যা মোট সংখ্যার ১১.৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ৪, যা মোট সংখ্যার ৩.৯৬ শতাংশ।
মহামারীর মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় হতাশাই এই আত্মহত্যার কারণ বলে গবেষকরা মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো নিয়ে অনুসন্ধান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা ৯।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যাটি ৬, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যাদের সংখ্যা ৩ জন।
আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
সমন্বয়কৃত তথ্যগুলোর মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গিয়েছে, যা মোট ঘটনার ৫৯.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৮-২১ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার ঘটনা মোট সমন্বয়কৃত ঘটনার ২৬.৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। এছাড়া ২৬-২৯ বছর এবং ২৯ বছরের উর্ধ্বে এই হার যথাক্রমে ৯.৯০ শতাংশ এবং ৩.৯৬ শতাংশ যা সংখ্যায় যথাক্রমে ১০টি ও ৪টি।
মাসভিত্তিক আত্মহত্যা প্রবণতা পর্যালোচনা তুলে ধরে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই হার সবচেয়ে বেশি ছিল, যা সমন্বয়কৃত ঘটনার ১৪.৮৫ শতাংশ বা ১৫ জন। সবচেয়ে কম ছিল এপ্রিল মাসে, যা ১.৯৮ শতাংশ বা ২ জন।
আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে বলা হয়, “দেখা যায় অনার্স পড়ুয়া ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি, ৩৬.৬৩ শতাংশ। ধারণা করা যায়, এই শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মাঝে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়।”
সমীক্ষা অনুযায়ী, সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৪.৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছে ১৯.৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০.৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং আর্থিক সমস্যা কবলিত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৪.৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। সমন্বয়কৃত তথ্য থেকে আরও দেখা যায়, মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে নিজের জীবন হননের পথ বেছে নিয়েছে ১.৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া আরও নানাবিধ কারণে আত্মহত্যা করেছেন মোট ২১.৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ জার্নাল/এএম
রাজশাহীর সময় / এফ কে