চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রী মারা গেছেন। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
ওই ছাত্রীর নাম নাঈম নির্মা। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি বাসার দুই তলায় থাকতেন ওই ছাত্রী। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বাসার অন্য দুইজনের সহযোগিতায় চবি মেডিকেলে নেওয়া হয় তাকে।
পরে দুপুর ২টার দিকে অক্সিজেন দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক সান্তনু মজুমদার। তবে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এক নম্বর গেট এলাকায় গেলে সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। পরে হাটহাজারী থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে পুনরায় চমেক হাসপাতালের উদ্দেশে যান তারা। সেখানে পৌঁছলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাঈমার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম নিথি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নাঈমার অ্যাজমার সমস্যা ছিল। শুক্রবার এ সমস্যা গুরুতর হলে তাকে চবি মেডিকেলে নেওয়া হয়। তার জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল। তবে চবি মেডিকেলে গাফিলতির কারণে অক্সিজেন দিতে দেরি হয়। যে সিলিন্ডারটি দিয়ে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়, সেটিও কিছুদূর গিয়ে শেষ হয়ে যায়। যা সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি প্রমাণ করে।
এদিকে নাঈমার মৃত্যুতে চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ এনে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা চবি মেডিকেলে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মেডিকেলের উন্নয়নে ১০ দফা দাবি পেশ করেন তারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন, ওষুধ সরবরাহ ও অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি, সাইকিয়াট্রিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নাঈমা নির্মার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সান্তনু মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, যে দুইজন ওই ছাত্রীকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছিলেন, তারা বাসার মধ্যে তাকে অজ্ঞানই পেয়েছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ও কোনো রেসপন্স পাননি বলে জানান। মেডিকেলে আসার পর করিডর থেকে চেক করে ভেতরে নিয়ে প্রেশারসহ সবকিছু চেক করে কোনো রেসপন্স পাইনি। তবুও ফারদার ম্যানেজমেন্টের জন্যই মেডিকেলে চেকআপের জন্য পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ওনার সঙ্গে যারা ছিলেন, আমি ইনডাইরেক্টলি তাদের বলেছি ওনার আব্বা-আম্মাকে খবর দিতে। কারণ, ইসিজি বা নিশ্চিত না হয়ে ডিরেক্টলি কিছু বলা যায় না। আমরা তাকে ১০ লিটারের হাই ফ্লো সিলিন্ডারটাই দিয়েছিলাম। এটা ৪৫-৫০ মিনিট চলার কথা।
চবি মেডিকেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তৈয়ব যুগান্তরকে বলেন, প্রশাসন থেকে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। চিকিৎসকের যদি কোনো গাফিলতি থাকে, অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।