২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:২৭:০১ পূর্বাহ্ন


নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুলের চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০১-২০২২
নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুলের চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুলের চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ে


প্রথমবারের মত শীতপ্রধান দেশের নজর কাড়া ফুল টিউলিপ চাষ হচ্ছে দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায়।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া ও শারিয়াল জোত গ্রামে আরএমটিপির আওতায় দেশের প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় উত্তরাঞ্চলের টিউলিপ চাষ সম্প্রসারণ উপ-প্রকল্প বিষয়ক টিউলিপ চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-ইএসডিও।

জানা যায়, টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল। এটি নেদারল্যান্ডসর ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়।

টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়।

উচ্চমূল্যের এই ফুলের বাণিজ্যিক চাষের উদ্যেশে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে ফার্ম আকারে চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আখতার।

গত সোমবার সকালে শারিয়াল জোত ও দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ তিনটি শেড ঘুরে দেখা যায়, ৪০ শতক জমিতে ৮ জন চাষী পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ ফুল।

তিনটি শেডের তিন সারিতে শতাধিকের বেশি টিউলিপ ফুটেছে। কয়েক দিন ধরেই একের পর এক ফুটতে শুরু করেছে এই ফুল। সাধারণত বেগুনি ও লাল রঙের ফুল ফুটতে দেখা গেছে।

ইএসডিওর এভিসিএফ আসাদুর রহমান জানান, টিউলিপ চাষ শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে শারিয়াল ও দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ হচ্ছে।

ডিসেম্বরে ৪০ হাজার বীজ রোপন করা হয়। টিউলিপের ৬টি ভাইলের ১২কালারের টিউলিপ চাষ হচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), বেগুনি প্রিন্স (বেগুনি), ডেনমার্ক (কমলা), রিপে (কমলা), অ্যাড রেম (কমলা), টাইমলেস (লাল সাদা শেড), ইলে দে ফ্রান্স (লাল), লালিবেলা (লাল), বার্সেলোনা (গাঢ় গোলাপী), মিল্কশেক (হালকা গোলাপী)।

আর ইএসডিওর এই প্রকল্পে ৮ জন নারী উদ্যোক্তা চাষ করছেন এই ফুল। এই উদ্যোক্তারা হচ্ছেন দর্জিপাড়ার মুক্তা পারভীন, আনোয়ারা বেগম, সুমি আক্তার ও শারিয়াল জোত গ্রামের আয়শা বেগম, হোসনে আরা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মোর্শেদা বেগম ও সাজেদা বেগম।

উদ্যোক্তা মনোয়ারার স্বামী আতিয়ার রহমান ও মোর্শেদার স্বামী নুরুল হক জানান, আমরা চারজন মিলে ২০ শতক জমিতে নেদারল্যান্ডের শীতকালিন ফুল টিউলিপ লাগিয়েছি। যা ইএসডিও আমাদের সহযোগিতা ও উদ্বুদ্ধ করেছে।

আমরা জেনেছিলাম ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকলে এ ফুল চাষ করা সম্ভব। এখন দেখছি রোপণের প্রায় মাস খানেকের মধ্যেই ফুল ধরতে শুরু করেছে। সীমান্তের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মতো জায়গায় বিদেশী ফুল চাষ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এ ফুল বাজারজাত করতে ইউএসডিও নিয়েছে, আশা করছি দাম পাব।

উদ্যোক্তা আয়শা আক্তার জানান, ইএসডিওর সহযোগিতায় আমি ৫ শতক জমিতে টিউলিপ লাগিয়েছি। বীজ লাগানোর প্রায় এক মাসের মাথায় ফুল আসতে শুরু করেছে। এই অঞ্চলে বিদেশী ফুল চাষ হবে কল্পনাই করতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ফুল দেখতে আসছে। এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় হলে আগামীতে আরও জমিতে এ ফুল চাষ করবো।

সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ মো. আল আমিন জানান, তেঁতুলিয়ায় শীত প্রধান অঞ্চলের বিদেশী ফুল টিউলিপ চাষ হচ্ছে ভাবাই যায় না। খুব ভালো লাগছে। এ ফুল যেমন অর্থনীতি সম্ভাবনা ঘটাবে তেমনি পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করবে।

ইএসডিওর সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আইনুল ইসলাম জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে ইএসডিওর উদ্যোগে পিকেএসএফ সহযোগিতায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের উপযোগিতা নির্ণয় শীর্ষক ভ্যালু চেইন পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রান্তিক ৮জন নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে পরীক্ষামূলক ৪০ শতক জমিতে টিউলিপ চাষ শুরু করেছি। টিউলিপের ৬ প্রজাতির ১২টি রং রয়েছে। যা এখন পারপল কালার তথা বেগুনী রংয়ের ফুল ধরেছে।

ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশে ফার্ম আকারে টিউলিপের চাষ এটাই প্রথম। বিদেশী ফুলটি দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াকে বেঁছে নিয়েছি। আমরা পাঁচজন প্রান্তিক চাষীদের নিয়ে ৪০ হাজার বীজ লাগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ ফুলের চাষ শুরু করেছি। ফুলও আসতে শুরু করেছে। আশা করছি এ ফুল চাষের মাধ্যমে চা শিল্পের মতো টিউলিপ চাষের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। অর্থনীতি, শৈল্পিক ও পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে এখনো সেভাবে টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু হয়নি। বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এখানে বেশ সময় শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এদেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপণের জন্য টিউলিপ গাছের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। আশা করছি পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

রাজশাহীর সময় / এফ কে