২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন


৭ জেলায় ৭ বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা!
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০১-২০২২
৭ জেলায় ৭ বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা! ৭ জেলায় ৭ বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা!


অবশেষে র‌্যাবের জালে ধরা পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে পরিচয় গোপন রেখে বিয়ে এবং কাতারে ও হজ্বে লোকজন পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া শাকিল মাহমুদ আজাদ নামের এক প্রতারক।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

তিনি জানান, গ্রেফতার শাকিল সংশ্লিষ্ট জেলার স্ত্রীদের এলাকায় ‘কাতারী জামাই’ নামে পরিচিত। বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জের কচুবুনিয়া গ্রামের তার ৫ম স্ত্রী ইতিমনি ও প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের টিম মঙ্গলবার গভীর রাতে তাকে কুমিল্লা নগরীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এ পর্যন্ত দেশের সাতটি জেলায় তার ৭টি বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতারক শাকিল কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার অশ্বদিয়া গ্রামের আবু হানিফের ছেলে।  

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন আরও জানান, বিয়ে প্রতারক শাকিল মাহমুদ আজাদ (২৯) পরিচয় গোপন রেখে খুলনা, রাজশাহী, নীলফামারী, ফরিদপুর, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ সাতটি জেলায় দরিদ্র পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে ৭টি বিয়ে করেন। এসব এলাকায় তিনি নিজেকে কাতারের বড় মাপের ব্যবসায়ী পরিচয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রথমে ঘনিষ্টতা গড়ে তোলেন এবং হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে দান-অনুদান প্রদান করে দানবীর ব্যক্তি সেজে এলাকার মানুষের মাঝে বিশ্বাস অর্জন করতেন। এসব এলাকায় তিনি ‘কাতারী জামাই’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেকার যুবকদের কাতারে নিয়ে মোটা অংকের বেতনে চাকুরি দেওয়া ও লোকজনকে হজ্বে নেওয়ার প্রলোভনে ফেলে পাসপোর্ট তৈরি ও ভিসা দেওয়ার কথা বলে ধাপে ধাপে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। 

এছাড়া বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারক শাকিল বিদেশ গমনেচ্ছুদের ব্লাঙ্ক চেক দিতেন এবং মসজিদে গিয়ে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতেন। এভাবে একেক জেলায় এরুপ প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে একপর্যায়ে বিয়ে করা স্ত্রীকে ফেলে সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে উধাও হয়ে যেতেন প্রতারক শাকিল ওরফে কাতারী জামাই। এদিকে শাকিল লাপাত্তা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতারিত লোকজন তার স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো এবং তার শশুরপক্ষের লোকজন প্রতারিতদের মামলার শিকার হয়ে এলাকা ছেড়ে পালাতেন। 

র‌্যাব কার্যালয়ে প্রতারিতদের মাঝে শাকিলের ৫ম স্ত্রী মাদ্রাসা ছাত্রী বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার কচুবুনিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে ইতিমনি (২০) সাংবাদিকদের জানান, প্রতারক শাকিল ১ বছর ৮ মাস আগে তাকে বিয়ে করেন। পরে ইতিমনির চাচা স্থানীয় মসজিদের ইমাম জাহাঙ্গীর আলমকে হজ্বে নেওয়ার কথা বলে শাকিল ২ লাখ টাকা এবং এলাকার আরও ১১ জনের কাছ থেকে কাতারে পাঠানোর নামে মোট ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে একপর্যায়ে উধাও হয়ে যান। ইতিমনি ও তার চাচা জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, এসময় তারা এলাকার প্রতারিতদের রোষানলে পড়েন এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। প্রতারক শাকিলের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় জানতে পেরে অবশেষে তারা র‌্যাব-কুমিল্লা কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেন।

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে শাকিল ওরফে কাতারী জামাইকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সাতটি জেলায় ৭টি বিয়ে করা এবং প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। সে ইতোপূর্বে একবার কাতারে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ইমিগ্রেশনে ভূক্তভোগীদের অনেকের অভিযোগ থাকায় ইমিগ্রেফশন কর্তৃপক্ষ তার বিদেশগমণ বাতিল করে দেয়। পরে সে চট্টগ্রামে গিয়ে গা ঢাকা দেয় এবং ছদ্মবেশে বেকারীপণ্যের ব্যবসা করতে থাকে। অবশেষে বাগেরহাটের ৫ম স্ত্রী ও পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাতারী জামাই শাকিলকে গ্রেফতারসহ তার কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে বুধবার বরুড়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সূত্র -ইত্তেফাক

রাজশাহীর সময় /এএইচ