আন্দোলনের ৩ মাস পার হয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেি বহাল আছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে নতুন করে সহকারী প্রক্টর পদেও আওয়ামীলীগপন্থী এক শিক্ষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফলে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নতুবা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানো হবে এমন হুশিয়ারী দিয়েছেন সমন্বয়করা।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) শেষ প্রহরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহীর অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, "০৭ দিনের মধ্যে প্রশাসনের ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ,কর্মচারীদের বিচারের আওতায় না আনলে রাবি প্রশাসনিক ভবনে তালা দিবে শিক্ষার্থীরা।"
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আবারো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "০৭ দিন পরে ভুলে যাবো আপনাদের সাথে আন্দোলন করেছি। শহীদের এক ফোটা রক্তের সাথে বেইমানী নয়। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পদত্যাগ করবেন।"
আরেক পোস্ট তিনি বলেন, "What is this রাবি প্রশাসন??
আট বছর হাউস টিউটর ছিল তাপসী রাবেয়া হলে তামজীদ হোসেন মোল্লা আওয়ামী শাসনামলে। তাকে নাকি অ্যাসিস্ট্যান্ট proctor হিসাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সে আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার ছিলো। কিসের ভিত্তিতে তাকে এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর নিয়োগ দিচ্ছেন?
আপনাদের বিরুদ্ধে কি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে??
অবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল এবং এর কারন দেখাবেন প্রশাসন। একের পর এক ফ্যাসিস্টদের পূনর্বাসন করছেন আপনারা"।
একই রাতে সমন্বয়ক মেহেদী সজীব তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, "বিগত স্বৈরাচার রেজিমের মদদপুষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের বিচার অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হলো।
আপনাদের উপর আমাদের একবুক আশা ভরসা ছিলো। কিন্তু বারবার আপনারা সেই আশাকে নিরাশায় রূপ দিচ্ছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচারের জন্য আর কোনো ছাড় হবে না। আর আপনাদেরকে কালক্ষেপণ করতে দেওয়া হবে না।
রুটিন দায়িত্ব পালন করার জন্য আপনাদেরকে ওই চেয়ারে বসানো হয়নি। জুলাইকে ধারণ করতে না পারলে জায়গা ছেড়ে দিন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যদি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা আমাদের চোখে না পড়ে তাহলে আপনাদের পদত্যাগ দাবি করতে আমরা দু'বার ভাববো না"।
অন্যদিকে সমন্বয়ক নওসাজ জামান তার স্ট্যাটাসে লিখেন, "এসব কি চলছে রাবি প্রশাসন? এগুলোতে কি আসলেই আপনাদের ইন্ধন আছে নাকি এদের ছাড়া অন্য কোনো সহযোদ্ধা খুঁজে পাচ্ছেন না নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিগুলো ফোর্স করছে?
যেখানে এদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার কথা সেখানে আপনারা এদেরকে রুমের মধ্যে জায়গা দিচ্ছেন কোন দৃষ্টিকোণ থেকে? অবিলম্বে তানজিদ হাসান মোল্লাকে বহিস্কার করতে হবে তারসাথে এমন দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে"।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রক্টর মো. তানজিদ হোসেন যোগদান করবেন না। তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর যদি কথা আসে আওয়ামীলীগের দোসর ও আন্দোলন বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে, সেগুলো নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। তবে প্রশাসনের একার পক্ষে সকলকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়৷ যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সেটা আমরা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদেরকে বলব আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সহকারী প্রক্টর হিসাবে নিয়োগ পান মো. তানজিদ হাসান মোল্লা। তিনি ৩ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে শিক্ষকদের করা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ রাবির ৪৬৭ নাম্বার ভোটার।