ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পর্নোগ্রাফি চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক প্রবাসীর স্ত্রী। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পর্নোগ্রাফি আইনের এ মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এরপর ওই চক্রের দুই নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই নারীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম রসূল। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী রোজভ্যালি গার্ডেন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলার সিকিপাড়া গ্রামের কাকলী বেগম (৩২) ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার আদর্শ গ্রামের তানিয়া খানম (৩২)।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন বোয়ালমারী উপজেলার হরিহরনগর গ্রামের সেলিম খান ওরফে সুমন শিকদার (৩৩), তার স্ত্রী ফারজানা বেগম (৩২), নয়নীপাড়া গ্রামের মুজাহিদ (২৫) ও কুমিল্লা জেলার মুরদনগর উপজেলার ঘোড়াশাল গ্রামের মো. বদিউল আলম তুহিন (৩৪)।
তারা সবাই পর্নোগ্রাফি চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের এক মালয়েশিয়ার প্রবাসীর বাড়িতে বিয়াইন হওয়ার সুবাদে যাতায়াত ছিল পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী উপজেলার আদর্শ গ্রামের তানিয়া খানমের। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তানিয়া খানম ওই প্রবাসীর স্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত ভিডিও নিজের মোবাইলে নিয়ে নেন।
সেই ভিডিও ‘সুপার এডিটি’ করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করেন তানিয়া।
এরপর থেকে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় পর্নোগ্রাফি প্রতারক চক্র।
প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওই প্রবাসীর স্ত্রী গত ২২ ডিসেম্বর বোয়ালমারী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। মামলার পরে পুলিশের এক দল অভিযান চালিয়ে বুধবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার রোজভ্যালী পার্ক থেকে দুই আসামি কাকলী বেগম ও তানিয়া খানমকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে আরেক আসামি বদিউল আলম তুহিন পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘তানিয়া খানম সম্পর্কে আমার বিয়াইন।
সেই সূত্রে আমার শ্বশুরবাড়ি এসে মোবাইল থেকে আমার ব্যক্তিগত ভিডিও নিয়ে সুপার এডিটিং করে। এরপর থেকে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করলে উপায় না পেয়ে ২২ ডিসেম্বর থানায় ৬ জনের নামে মামলা করি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম দেওয়ান বলেন, ‘প্রবাসীর স্ত্রীর মামলার ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের দুই নারী সদস্যকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী রোজভ্যালী গার্ডেন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সকলেই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।’
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম রসূল বলেন, ‘পর্নোগ্রাফি আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’