প্রতারনা ও জালিয়াতির অভিযোগে অবৈধ ৪জন নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন কাজী মোঃ নুরুল আলম। তিনি রাজশাহী মহানগরীতে (রাসিক ১৮ নং ওয়ার্ড) ২৭ বছর যাবত সুনামের সাথে নিকাহ রেজিস্ট্রি করে আসছেন। এছাড়াও রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ও দৈনিক প্রধান সংবাদ পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো চীফ হিসেবে কর্মরত আছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এই মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলার বিবাদীরা হলেন, কাজী মোঃ আব্দুল বারী, কাজী মোঃ মোজাম্মেল হক, কাজী মোঃ সেতাউর রহমান ও কাজী মোঃ তাজেমুল হক।
মামলার বরাত দিয়ে জানা যায়, বিবাদীরা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বিবাহ্ ও তালাকের নিবন্ধন করে আসছেন এবং বিভিন্ন কাজী সমিতির নাম ব্যবহার করে থাকেন। ফলে সাধারণ জনগণ প্রতারিত হচ্ছেন। সেই সাথে প্রকৃত পেশাদার কাজীগণের সুনামক্ষুন্ন হচ্ছে। এহেন বির্তর্কীত কর্মকান্ড থেকে মামলার বিবাদীগণকে বার বার বিরত থাকতে বলা হলেও তারা বাদীর কোন কথায় কর্ণপাত না করে অবৈধ উপায়ে বিবাহ্ তালাকের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধের বিষয়ে সতর্ক করায় বাদী-সহ মোট ১০জন পেশাদার কাজীর বিরুদ্ধে কাজী মোঃ মোজাম্মেল হক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ইতিপূর্বে এ ব্যপারে বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
কাজী মোঃ আব্দুল বারী নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য আবেদন করলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং-৫৬৪ বিচার ৭/২ এন-৭৪/৮৪ গত ইং ১৭ জুলাই ১৯৯৫ তারিখে দরখাস্তটি নামঞ্জুর করেন। জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি করার জন্য তাহার কোন আদেশ নাই। ফলে তাহার নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্সের কোন আইনগত বৈধতা না থাকা সত্বেও জেলা রেজিস্ট্রারকে ভুল তথ্য দিয়ে ১৯৯৫ সাল হইতে অদ্যবধি সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রি করে আসছেন। আলিম সার্টিফিকেট না থাকা সত্বেও অর্থাৎ চুনাখালি এনায়েতুল্লাহ সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় সাধারণ বিভাগে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ গ্রহন করে ১৯৮৯ সালে অকৃতকার্য হয়, যাহার শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৭-১৯৮৮ রেজিঃ নং-১১১১২ রোল নং-৮২৩৬ উক্ত তথ্য গোপন করে ১৯৯০ সালে দিশবন্দি হাতিশাল ফাজিল মাদ্রাসা, দিনাজপুর থেকে আলিম পরীক্ষায় সাধারণ বিভাগে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ গ্রহন করে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। যাহার শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৮-১৯৮৯ রেজিঃ নং- ১২৭৪৭ রোল নং-১৩৮১৮ হইতেছে। যাহা পাবলিক পরীক্ষা নীতিমালার পরিপন্থি। সরকারী বিধি বহির্ভুতভাবে পাবলিক প্রেসে ছাপিয়ে ১৯৮১ সাল হতে ১৬ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ৫৯১টি এ.বি.সি ও ডি রেজিস্টার বহি ব্যবহার করেছেন।
কাজী মোঃ মোজাম্মেল হক, গত ১৮ মে ২০০০ গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় বিচার শাখা ৭ শাখার ১১৪-১(৮) বিচার-৭/২ এন-২৩/৯৮ দ্বারা কাজী মাওলানা মোঃ আমিরুল ইসলামের নিকাহ রেজিস্ট্রি এলাকা হতে ৮নং দেবীনগর ইউনিয়ন কর্তন পূর্বক অস্থায়ী ভিত্তিতে নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স প্রদান করার অনুমোদন যাহা ভুয়া ও অস্তিত্বহীন ভাবে তৈরি করে। যার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় জেলা রেজিস্ট্রারকে গত ২১ আগস্ট ২০০১, ৭৬৪ বিচার ৭/২ এন ৭৪/৮৪ স্মারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। উক্ত তথ্য গোপন করে পূণরায় ৭নং চরঅনুপনগর ইউনিয়ন ও ৮নং দেবীনগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স হাসিল করে। কিন্তু অসদাচরনের দায়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০০২, ১৩৬৭ বিচার ৭/২ এন ৮৫/৮৬ নং স্মারকে তার নামীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নেয়। ওই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে ১৮১০/২০০৩ নং রিট পিটিশন দায়ের করলে উক্ত রিট পিটিশনটি দোতরফা শুনানী অন্তে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ ডিসচার্জ হয় এবং উক্ত ডিসচার্জ আদেশ গোপন করিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ ১ম এর আদালতে ০৬/০৮ অঃ প্রঃ ঘোষণামূলক ডিক্রির প্রার্থণায় মামলা করিলে বিজ্ঞ বিচারক দোতরফা শুনানী অন্তে গত ৯ জুন ২০১৩ তারিখে ১০হাজার টাকা খরচাসহ ডিসমিস করেন।
কাজী মোঃ সেতাউর রহমান, স্বাক্ষরিত গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ জেলা রেজিস্ট্রার চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ে বহি ব্যবহারের তথ্য প্রদানে দেখা যায় ১৯৯৫ সাল হইতে বহি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু নিকাহ রেজিস্ট্রার তালিকাতে দেখা যায় ৩০ জুলাই ১৯৯৮ সালে নিয়োগ পেয়েছেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অবৈধ ও বেআইনীভাবে বিবাহ তালাক রেজিস্ট্রি করেছেন।
কাজী মোঃ তাজেমুল হক মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রানালয় গত ১৮ জুলাই ২০০৪ তারিখে ৮১৯ বিচার-৭/২ এন-৮৫/৮৬ নং স্বারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১১ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তার বিরুদ্ধে কাজী মোঃ দুরুল আলম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সহকারী জজ আদালতে নং-১১২/২০০৪ অঃপ্রঃ দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১১ ও ১৫ নং ওয়ার্ডে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন না করতে পারে সেই মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ প্রদান করেন।
কাজী মোঃ আব্দুল বারী বারঘরিয়া ইউনিয়নের সহকারী হিসাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি চামাগ্রাম গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।