দেশের অন্যতম বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় গত ১৫ দিনে পাইকারিতে চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া এবং স্থানীয় বাজারে ধানের দাম প্রতি মণে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বেড়েছে। ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় চালের দাম বাড়লে বা কমলে সারা দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ে।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় চালের পাইকারি মোকাম শহরের আলুপট্টি এলাকার বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন মিল গেটে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে পাইকারিতে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা।
দুই সপ্তাহ আগে মানভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) জিরাশাইল চালের দাম ছিল ৩ হাজার ১৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। শুক্রবার সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। একইভাবে কাটারিভোগ চালের প্রতি বস্তা দুই সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ৩ হাজার ৩৫০ থেকে ৩ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
এছাড়া মোটা চাল হিসেবে পরিচিত বিআর-২৮ ও ২৯, শুভলতা, পারিজা ও মোয়াজ্জেম চালের দামও বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বিআর-২৮, পারিজা, শুভলতা ও মোয়াজ্জেম চাল মানভেদে ৫৮-৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর খুচরা পর্যায়ে সরু চাল জিরাশাইলের কেজি ছিল ৬৮-৭২ টাকা। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৪ টাকা কেজিতে।
নওগাঁ শহরের সিও অফিস এলাকার সোহেল ট্রেডার্সের মালিক সোহেল রানা বলেন, পাইকারিতে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে পাইকারিতে ৬৮ টাকা কেজি দরে জিরাশাইল চাল কিনে খুচরায় আমাদের ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে খুচরায় এই চালের দাম ছিল ৬৮ টাকা। কাটারিভোগ চালের দাম আগে ছিল ৭২ টাকা কেজি। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা কেজি দরে। সরু চালের মতো মোটা চালের দামও কেজিতে ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বাজারে প্রতি মণ জিরাশাইল ধানের দাম বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬২০ টাকা। কাটারিভোগ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। এছাড়া শুভলতা, পারিজা ও বিআর-২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা মণ দরে। ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বৈরি আবহাওয়া এবং বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধানের দাম বাড়তি। আর ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবে চালের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টন। আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুম মিলে জেলায় ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। জেলার অভ্যন্তরে বার্ষিক চালের চাহিদা সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন। জেলায় উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ ১২ লাখ মেট্রিক টন, যা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নওগাঁয় ইতিমধ্যে দুই একটি জায়গায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো ধান কাটা মৌসুম শুরু হয়ে যাবে। নতুন চাল বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।