২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৪৩:৫৬ পূর্বাহ্ন


সংসার শুরুর আগেই বিচ্ছেদের পথে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৪
সংসার শুরুর আগেই বিচ্ছেদের পথে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক


সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা প্রম্প কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক। এই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজি হলেও এখন পিছু হটছে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু এখন দুই ব্যাংক‌ই একে অপরের সঙ্গে মার্জ বা একিভূত হতে রাজি নয়।

বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। মানুষ এক্সিম ব্যাংকে প্রচুর আমানত রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছি। সাড়ে ৩ শ থেকে ৪শ কোটি টাকা তারল্য সহয়তা পাওয়া গেলে আরো সুবিধা হবে।

এদিকে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কাজি মো. তালহা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরাও এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একত্রিত হতে চাই না।

আমার বিশ্বাস, একটু সহায়তা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু তারল্য সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে পদ্মা ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের ব্যাংক অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মার্জ হওয়ার সিদ্ধান্ত আসার পর গ্রাহক আবারো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
এখন আমরা চাই নিজেরাই নিজেদের মতো ঘুরে দাঁড়াতে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এক্সিম ব্যাংকে নতুন করে আবার কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে ভাববে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক দুটি এক হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের ব্যাংকিং টাস্কফোর্স। তারা ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা করে দেখবেন এবং কোন সমস্যার কী সমাধান তার সুপারিশ করবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি উঠে আসে। এমনকি দুর্নীতিতে নুয়ে পড়া ব্যাংকে তৈরি হয়েছে বড় আকারের তারল্য সংকট। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এক্সিম ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদদের সদস্যরা। তারা ব্যাংকের নানা সমস্যা তুলে ধরেন গভর্নরের কাছে। চান তারল্য সহায়তা।

গত আগস্ট মাসের ২৯ তারিখ এক্সিম ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা সাবেক পর্ষদের আগ্রাসি ঋণ বিতরণের তথ্য ও ঋণ আদায়ের তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। জুলাই মাসের শেষ দিকে নামে বেনামে এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করায় দায়ে যাত্রাবাড়ী থানায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। সেই মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো ব্যাংক খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। নজরুল ইসলাম মজুমদারও ওই সময় থেকে প্রকাশ্যে আসেননি। ক্ষমতার পালাবদলে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ অগাস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি। 

এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হয় শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ। নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। আর বিএবির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন ২০০৯ সাল থেকে।

চলতি বছরের ১৮ মার্চ শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে এ সময় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দুই ব্যাংকের উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।