চামড়া শিল্পের বর্জ্য থেকে টাইলস থেকে শুরু করে বন্ডেড লেদারসহ বিভিন্ন উপাদান উৎপাদন করা সম্ভব। বছরে এ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আয় হতে পারে। পাশাপাশি এ বর্জ্য অপসারণ প্রকৃতিবান্ধব হলে বাড়বে পণ্যমূল্য। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর মাধ্যমে শুধু নদীর দূষণই কমবে না, ঘুরে দাঁড়াবে পুরো এ শিল্পখাত।
ট্যানারি শিল্প অধ্যুষিত সাভারের হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরী নদীর পানিতে পড়ে দুর্গন্ধযুক্ত কঠিন বর্জ্য। এতে আছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্রোমিয়াম মিশ্রিত তরলও। কাজেই ভালো নেই ওই এলাকার বাতাসও। দূষিত হয়ে পড়েছে এখানকার গোটা পরিবেশ। তবে অনেকের ধারণা, পরিবেশগত এ দিকটা ছাড় দিলেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প।
কিন্তু বাস্তবতাটা তা নয়। উন্নত দেশগুলোতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে প্রয়োজন হয় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ সনদ। এ সনদ পেতে মোট ১ হাজার ৭১০ নম্বরের মূল্যায়নে ৩০০ নম্বরই থাকে বর্জ্যব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত। দেশে দুশতাধিক কারখানার মধ্যে এ সনদ রয়েছে মাত্র ৭টির। এর মধ্যে সাভারের বিসিক শিল্প নগরীতে আছে মাত্র একটি।
ফলে, ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি চামড়া শিল্প। মাত্র দুই অর্থবছর ছাড়া কোনও বছরই পূরণ করা যায়নি লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণও। এ উভয় সংকটের সমাধান মিলবে কিসে?
ইন্সটিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের মতে, তরল বর্জ্যের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই নদীর পানি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক এ ক্রোমিয়াম বর্জ্য থেকে আলাদা করে ফের ব্যবহার করা সম্ভব।
এবার আসা যাক, কঠিন বর্জ্যের কথায়। প্রতি বছর হেমায়েতপুরে প্রায় ৯০ হাজার টন চামড়ার কঠিন বর্জ্য জমা হয়। এগুলো দিনের পর দিন পচে-গলে পরিবেশকে করে তোলে দূষিত।
দূষণের এ মহাউৎসবের মধ্যেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক অবকাঠামো গড়তে পারলে এর প্রায় ৯৫ শতাংশ বর্জ্য দিয়েই টাইলস থেকে শুরু করে বন্ডেড লেদারসহ বিভিন্ন উপাদান উৎপাদন করা সম্ভব। এ থেকে প্রতি বছর ৪০০-৫০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করা যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, পরিবেশবান্ধব আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শুধু নদী দূষণই কমবে এমনটা নয়। এলডব্লিউজি সনদ পেলে বহির্বিশ্বে বাড়বে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের কদর।
এ বছর চামড়া শিল্পনগরীর ছটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। পরিবেশের স্বার্থে ব্যাপারটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশবিদরা।