কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিএনপির অন্তত ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ও গুলিবিদ্ধ গুরুতর একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাছপাড়া গ্রামের সরকার পাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন—কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি ছানোয়ার মন্ডল, মাছপাড়া গ্রামের মৃত উম্বাদ মণ্ডলের ছেলে আমির মন্ডল, একই গ্রামের সানোয়ার মণ্ডলের ছেলে রবিউল ইসলাম, উম্বাদ মণ্ডলের ছেলে জিয়ারত আলী, বিপ্লাজ, স্বপন, ইকলাস, শলক, মনির। তাদের মধ্যে আমির ও রবিউল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জিয়ারত আলী। তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
অভিযুক্তরা হলেন—মাছপাড়া এলাকার তনশের মণ্ডলের ছেলে মুক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে সালাম, জলিল আলীর ছেলে আবেদ, সেকেন, ইকতার, আইয়ুব। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান এবং ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিদ মেম্বারের নেতৃত্বে তারা রাজনীতি করেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমির মন্ডল বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে আমি ও আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মী সরকার পাড়া মোড়ে বসে ছিলাম। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান এবং ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিদ মেম্বারের লোকজন অস্ত্রসজ্জিত হয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে গুলি করেন। পরে তারা আমাদের মারপিট, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় ও গুলি করে।
তিনিই আরও বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে আওয়ামী লীগের তনশের মণ্ডলের ছেলে মুক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে সালাম, জলিল আলীর ছেলে আবেদ, সেকেন, ইকতার, আইয়ুব ও তাদের লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আর আমরা বিএনপির রাজনীতি করি। তাদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা দুজন গুরুতর আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রবিউল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও মজিদ মেম্বার গত কয়েকদিন আগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মেহেদী চেয়ারম্যান ও মজিদ মেম্বারের নেতৃত্বে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে দেড় যুগ ধরে। সরকার পতনের পরও তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তনশের মণ্ডলের ছেলে মুক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে সালাম, জলিল আলীর ছেলে আবেদ, সেকেন, ইকতার, আইয়ুব ও তাদের লোকজন আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী ও অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, হাসিনা সরকার পতনের পরও আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা মেহেদী চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা মজিদ মেম্বারের লোকজন বেপরোয়া। তারা তাদের লোকজন নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আগের মতোই। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও তাদের লোকজন। গত কয়েকদিন আগে মেহেদী ও মজিদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এরপর আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তনশের মণ্ডলের ছেলে মুক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে সালাম, জলিল আলীর ছেলে আবেদ, সেকেন, ইকতার, আইয়ুবের নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে বহু বছর ধরে বিরোধ ছিল। সরকার পতনের পরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকায় থেকে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিল। পূর্ব শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার ও আওয়ামী লীগের দখলে থাকা চাপাইগাছি বিলকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে তাদের দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত রাতে (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির ওপর হামলা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাপাইগাছি বিল দখলের চেষ্টার অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মেজর বলেন, ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা মেহেদী ও আওয়ামী লীগের নেতা মজিদ মেম্বারের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে দেড় যুগ ধরে। সরকার পতনের পরও তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করায় তনশের মণ্ডলের ছেলে মুক্তার, মালেক মণ্ডলের ছেলে সালাম, জলিল আলীর ছেলে আবেদ, সেকেন, ইকতার, আইয়ুব ও তাদের লোকজন আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। চাপাইগাছি বিল দখলের চেষ্টার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা। বিলের প্রতি আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক৷
কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, পূর্ব শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার ও বিল দখলকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে পুলিশ। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।