অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে কটূক্তি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে আলোচনায় আসেন লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি।
এ ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ও আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এ তথ্য। এতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লবের শহীদ আবু সাইদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া, জুলাই-আগস্ট গণহত্যা তদন্ত সাপেক্ষ ও অমীমাংসিত বলে গণহত্যার সমর্থন করাসহ ফেসবুকে নানা বিভ্রান্তিকর লেখার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্রজনতার বিপ্লবকে অস্বীকার করার জন্য শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী তাপসী তাবাসসুম উর্মীকে ক্যাম্পাসে আজীবন অবাঞ্চিত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবি প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি করছি তাপসী তাবাসসুম উর্মীর সনদ বাতিল করার জন্য। এছাড়াও বর্তমান সরকারের কাছে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি করছে যে, তাপসী তাবাসসুম উর্মীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। জুলাই বিপ্লব অস্বীকার ও শহীদদের নিয়ে কটুক্তি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এদিকে, ফেসবুকে উর্মির বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় ফেসবুকে একটি পোস্ট প্রদান করেছেন জাতিসংঘ ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থায়ী সংবাদদাতা ও সাউথ এশিয়া পারস্পেক্টিভসের নির্বাহী সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন, ‘তাবাসসুম ঊর্মি যদি ভারতে আশ্রিত বিচ্ছিন্নতাবাদী পালাতক স্বৈরাচারিনীর গর্বিত উত্তরাধিকারিণী হতে চায়, হউক। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের আসনে বসে সরকার পতনের হুঙ্কার দিবে-এটা সহ্য করা যায় না।' ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতীক হিসেবে পরিচিত আবু সাঈদকে নিয়ে ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ওই সরকারি কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার বিপ্লব এবং এই বিপ্লবের মহানায়ক আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছে। খবরে দেখলাম এডভোকেট জেড আই খান পান্না তার জন্য দরদী হয়েছেন। আমার জানতে চাওয়া, উকিল সাহেব যদি জানতে পারেন তার চেম্বারের কেউ একজন তাকে বিচারাঙ্গন থেকে সরিয়ে দিতে তৎপরতা শুরু করেছে, তবে তিনি কী ব্যবস্থা নিবেন? তাকে কি অবলীলায় তা করতে দিবেন ?’ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল মনে করার কারণ নেই জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘শোনেন তবে, সরকার প্রধান প্রফেসর ইউনূসের উদারতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না এবং এই সরকারকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই’। এছাড়া এ ধরনের কর্মকর্তাদের প্রতি কোনো ছাড় না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘আর সরকারে দায়িত্বরতদের বলি, ফ্যাসিস্টদের প্রতি বিন্দুমাত্র কোনো সহানুভূতি প্রদশর্ন নয়। নিরপেক্ষতার নামে কেউ যাতে খুনিদের পক্ষাবলম্বন বা পুনর্বাসনের চেষ্টা না করেন। বাকিটা আর পাবলিক করতে চাই না’।
প্রসঙ্গত, তাপসী তাবাসসুম উর্মি নেত্রকোনার পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের কন্যা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে উর্মি সবার বড়। উর্মি‘র বাবা ময়মনসিংহ আনন্দমোহন সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বুলবুল বলেন গ্রামের বাড়ি নসিবপুর হলেও ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহে থাকেন। মাঝে মধ্যে তারা নসিবপুর আসেন। উর্মির বাবা ইসমাইল হোসেনের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিন জানান, তাপসী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০২২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে সে। সে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সরাসির যুক্ত ছিল। অপরদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দেওয়া ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বির্তকিত লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ‘সাদাসিধে কথা’ নামে নিজের একটি ওয়েবসাইটে বিষয়টি নিয়ে দুই প্যারায় ছোট্ট মতামত তিনি লিখেছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার।’ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরো লেখেন, ‘আর যে কয় দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন।
দলকানা কথিত প্রগতিশীল আদর্শের পন্ডিত জাফর ইকবালের ঘনিষ্টজন ছিল তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। শাবিতে অধ্যয়নকালে বেহায়াপনা সহ অপসংস্কৃতির চর্চায় জাফর ইকবালের সাথে নেচে গেয়ে সময় অতিবাহিত করেছিলেন যেসকল শিক্ষার্থী উর্মি তাদের একজন। এর আগে বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুমের (উর্মি) বিরুদ্ধে এবার লালমনিরহাটে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের এজহার দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি তাহিয়াতুল হাবিব মৃদুল।