১৫ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:০৬:৫৫ অপরাহ্ন


ফুলবাড়ীতে রাত জেগে হিন্দুপাড়াগুলো পাহারা
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৪
ফুলবাড়ীতে রাত জেগে হিন্দুপাড়াগুলো পাহারা ফুলবাড়ীতে রাত জেগে হিন্দুপাড়াগুলো পাহারা


দুর্বৃত্তদের হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা থেকে নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে পালাক্রমে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের নারী-পুরুষ। তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ তার নেতাকর্মীরা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত হামলা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ সহিংসার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ফুলবাড়ী উপজেলায়। এতে চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সংখ্যালঘু হিন্দু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামবাসীরা।

সরেজমিনে শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার ৫নং খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের অম্রবাড়ী সরকার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের দুর্গা মন্দির চত্বরে গ্রামের একদল নারী ও পুরুষসহ কিশোর-তরুণ বিভিন্ন লাঠি-সোটা, দা, খোন্তা হাতে পাহারায় বসে আছেন তারা।

গ্রামের গৃহবধূ রেখা রানী, তাপসী রানী রায়, বালী রানী, গৃহকর্তা প্রফুল্লা রায়, গনেশ রায় ও দূত কুমার সরকার বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত হামলা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ সহিংসার ঘটনায় গ্রামেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন থেকে আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। বাধ্য হয়ে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য শুরু করা হয় প্রতিটি বাড়ী থেকে একজন করে সদস্য নিয়ে পালাক্রমে রাত জেগে গ্রাম পাহারার ব্যবস্থা। গ্রাম পাহারার জন্য প্রতি পরিবার থেকে একজন সদস্যের কথা বলা হয়। কিন্তু প্রত্যেক বাড়ীর প্রায় সব নারী ও পুরুষ, কিশোরাও নিজেই নেমে পড়ছেন রাত জেগে গ্রাম পাহারার জন্য। সকলের হাতে থাকছে লাঠিসোটাসহ দা, কুড়াল ও খোন্তা।

গ্রামের পারুল রানী ও পলাশ রায় বলেন, পাহারার মধ্যেও গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একদল দুস্কৃতিকারী গ্রামের হামলা করার চেষ্টা করার চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রামবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

গ্রামের কার্তিক চন্দ্র রায় ও কিশোরী মোহন সরকার বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বিভিন্ন এলাকায় হামলা, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটতে শুরু হয়। এতে অম্রবাড়ী গ্রাম যেহেতু হিন্দু অধ্যুষিত সে কারণে আতঙ্কটা এ গ্রামেরও ছড়িয়ে পড়ে। দুবর্ৃৃত্তদের দ্বারা গ্রাম আক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী। এ কারণে নিজেরাই গ্রাম পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে ঘটনার প্রথম দিন থেকেই গ্রামবাসীর নিরাপত্তার ও আতঙ্ক দূর করতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে তার নেতাকর্মীরা। প্রত্যেক দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন চৌধুরী তার লোকজন নিয়ে গ্রামগুলোতে টহল দিয়ে থাকছেন। তার টহলের জন্য গ্রামবাসীর মনোবল দৃঢ় হচ্ছে।

খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এদেশ আমাদের। দেশের মানুষ আমাদের। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই এদেশের নাগরিক এবং ভাই। দেশনেত্রী বেগম জিয়া এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ যেন কারো ওপর কোনো প্রকার প্রতিশোধমূলক হামলা, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতা না ঘটায়। এজন্য আমরা প্রথমদিন থেকেই ইউনিয়নের প্রত্যেকটি হিন্দু ও আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম ও মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে টহল দিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ইউনিয়নে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি আগামীতেও ঘটবে না।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এটি ভালো দিন। এমন কাজ প্রত্যেক এলাকায় করা গেলে ভালো হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক গ্রাম গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সাধ্যমতো পাহারার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই সজাগ ও সতর্ক রয়েছেন যাতে কোথাও কোনো দুর্বৃত্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে।