ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদকে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দায়িত্ব থেকে বদলি করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চলমান কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের পরিস্থিতি যখন চরমে, ঠিক এই সময় গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বদলি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানারকম আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার এই বদলিকে শাস্তি হিসাবে দেখলেও এ ঘটনাকে ‘আরও বিস্তৃত পরিসরে’ কাজ করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তার ডিবিতে শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি অল্প সময় কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আরেকটি জায়গায় পদায়ন করেছে। ডিএমপিতে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
ওই সময় তিনি বলেন, মানুষের সব শেষ ভরসাস্থলের জায়গা থানা। থানা যেন মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমি চেষ্টা করব। যাতে সাধারণ মানুষ থানায় আসে এবং সেবা পায়। যে কোনো ঘটনায় থানায় গিয়ে জিডি-মামলা করতে পারে। চেষ্টা করব থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থায় নিয়ে যেতে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি কার্যালয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ নেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তাদের সঙ্গে খাওয়ার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হলে তা নতুন আলোচনা তৈরি হয়। এ নিয়ে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশের পর হারুন অর রশীদের বদলির আদেশ আসে।
তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার আশরাফুজ্জামান। তিনি এর আগে ডিএমপির লজিস্টিকস ফিন্যান্স ও প্রকিউরমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।
ডিবি থেকে বিদায়ের সময় হারুন বলেন, আমি তিন বছর তিন মাস ডিবিতে কাজ করেছি। আপনারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। আমি চেষ্টা করেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মেনে ডিবিকে সাধারণ মানুষের আস্থার দোঁরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া।
ডিবিকে আস্থার জায়গা করতে পারার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরিকালীন আমি সাধারণ মানুষের কাছে ডিবিকে একটি আস্থার জায়গায় পরিণত করেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, তথা বিশ্বের মানুষ জানে কারও কোনো সমস্যা হলে ডিবিতে গেলে প্রবলেম সলভ হতে পারে। এই মনে করে অসংখ্য মানুষ আমাদের কাছে আসছে। আমরা চেষ্টাও করেছি তাদের কাজটা সুন্দরভাবে করে দেওয়ার। যার কারণে সাধারণ মানুষ ডিবির নামটা জানে। আমি চেষ্টা করেছি ডিবিকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে।
ডিবির দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে দুপুরে খাওয়ান। সেসব ছবি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা।
এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে বেদম পিটুনির ঘটনায় আলোচিত হন।
পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের আগস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
একই বছরের ২ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে হারুনকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদককারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এমএ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনার জন্ম দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়েছিল। পরে আবার তাকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ঢাকার ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।