নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রোগ বালাই। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের মাঁচাগুলোতে ঝুলছে অগণিত কচিসহ পরিপক্ক পটল। ফলন ভালো হওয়ায় পটল নিয়ে এবার লাভবান হচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পটলচাষীরা।
বিগত বছরের তুলনায় বাজার দাম বেশ ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। ফলে এবছর পটল চাষে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। আশানুরূপ লাভের মুখ দেখছেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার ৬নং দৌলতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই ইউনিয়নে বেশিভাগ জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন হয়। ভালো ফলন হওয়ায় ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন মৌসুমি শাক-সবজি চাষ করেন এই এলাকার কৃষকরা। এখন ক্ষেতেজুড়ে নানা সবজি। তার পাশাপাশি মাচায় ঝুলছে পটল। আর সে পটল পরিচর্যাসহ তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বাজার দর ভালো হওয়ায় পরিপক্ক পটলগুলো তুলে নিচ্ছেন তারা।
ইউনিয়নটির বারাইপাড়া গ্রামের পটল চাষি আব্দুল মালেক বলেন, কার্তিক মাসে ৮ শতাংশ জমিতে তিনি পটল চাষ করেছেন। চাষাবাদে এ পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। প্রকৃতিক দুর্যোগসহ রোগ বালাই না থাকায় এবছর পটলের ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছে তিনি। এখন ক্ষেতে যে পরিমাণ পটল রয়েছে,ু তা অন্তত ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। মাসে দুইবার পটল তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।
কথা হয় আরেক পটল চাষি মিজানুর রহমানের সাথে। তারা সাথে চাষআবাদ নিয়ে কথা বললে তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকে পিতার সঙ্গে নিজের জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করে আসছেন। এখন তার বয়স ৩৫ কিংবা ৩৬ হবে। এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে তিনি তার জমিতে দেখতে পান’নি কিংবা কোনোপ্রকার সহযোগিতাও পান’নি। বিভিন্ন প্রকার আবাদের সঙ্গে বছরজুড়ে থাকলেও কৃষি অফিস থেকে কোনোপ্রকার প্রণোদনা পান’নি তিনি। আবার এলাকার কিছু লোক আছেন, যারা কোনোদিন কোনো কিছু আবাদের সঙ্গে জড়িত না তারাই পাচ্ছেন প্রণোদনা। যেগুলো পাওয়া মাত্রই বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তিনি এবছর তার ৫ শতক জমিতে পটল চাষ করেছেন। বিগত বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে এবং বাজার দর ভালো যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের মৃত মফুর উদ্দিনের ছেলে পটল চাষি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর ১৬ শতাংশ জমিতে পটল চাষ করেছিলেন। কিন্তু পচানি রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮ শতাংশ জমির পটল ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৮ শতাংশ জমির পটল ক্ষেত ভালো রয়েছে। মাঘ মাস থেকে ক্ষেতের পটল বিক্রি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই জমি থেকে প্রায় ৭ হাজার টাকার পটল বিক্রি করা হয়েছে। আরও অন্তত ২৫ হাজার টাকার পটল বিক্রি করা যাবে বলে তিনি দাবি করেন। তবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত পটল চাষাবাদে খরচ হয়েছে সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার টাকা। দুই-একজন পটল চাষির পটল ক্ষেতে রোগ বালাই ধরলেও বেশির ভাগই পটল ক্ষেত ভালো রয়েছে এবং সেগুলোতে ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন। এতে করে আগামীতে এলাকায় আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পটল আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহানুর রহমান বলেন, উপজেলার কৃষি ও কৃষককে আর্থিকভাবে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর নিরলসভাবে কৃষকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। একইভাবে এলাকার কৃষকদেরকে পটল চাষে সার্বিক সহযোগিতকা ও কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।