ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে । চলতি সপ্তাহেই বহু প্রতীক্ষিত এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারেও বলে আশা প্রকাশ করছেন হামাস কর্মকর্তারা। জানা গেছে, জিম্মি বিনিময়ের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে- যুক্তরাষ্ট্রের এমন গ্যারান্টিতে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে যাচ্ছে হামাস।
শনিবার (৪ এপ্রিল) কায়রোতে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সাথে বৈঠকে হামাসের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বসার পর ফিলিস্তিনি আল-কুদস পত্রিকা এমন তথ্য জানিয়েছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েল’র।
ফিলিস্তিনি আল-কুদস পত্রিকা বলেছে, মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করবে এবং এর তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে গাজা থেকে ইসরাইল সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের একটি সূত্র ইসরাইলের চ্যানেল ১২ নিউজেও একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে।
এর আগে, মধ্যস্থতাকারীদের আলাপ-আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হামাসকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসরাইল। এ সময়ের মধ্যে রাজি না হলে রাফায় সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণাও দিয়েছিল দখলদাররা।
জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর করতে সম্মত হলেও শনিবার পর্যন্ত চুক্তির তথ্য হাতে পৌঁছায়নি বলে দাবি ইসরায়েলের। ফিলিস্তিন ও সৌদি আরবের মিডিয়ায় বলা হয়েছে, চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দু’পক্ষ। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই ঘোষণা দেবে হামাস।
তবে, যুদ্ধবিরতি শেষে গাজা থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের যুক্তরাষ্ট্রের গ্যারান্টির বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ শেষ করার চুক্তিতে সম্মত হবে না ইসরায়েল, বরং হামাস নির্মূলে রাফায় অভিযান চলবে।
এদিকে, নতুন যুদ্ধবিরতির মেয়াদ হবে ৪০ দিন এবং চুক্তিটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। এর প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মির ও ইসরায়েল কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। একই সঙ্গে গাজায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির তৃতীয় ও শেষ ধাপে মৃত জিম্মিদের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হলে উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা চলে যাবে।
তবে, ইসরায়েল বরাবরই বলে আসছে যে হামাসের সাথে সম্ভাব্য চুক্তি হোক বা না হোক, তারা রাফাহ অভিযান চালিয়ে যাবে। জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছে যে স্থল অভিযানের ফলে রাফায় আশ্রয় নেয়া দেড় মিলিয়নেরও বেশি লোকের জন্য বিপর্যয় নেমে আসবে।
কায়রোতে হামাসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আসা সংগঠনটির একজন সিনিয়র মুখপাত্র ওসামা হামদান জানান, ‘কিছু অগ্রগতি’ হয়েছে।
সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, আলোচনা একটি জটিল পর্যায়ে রয়েছে কারণ একটি কাতারি ‘টেকনিক্যাল টিম’ মিসরীয়দের সাথে একটি সম্ভাব্য চুক্তির বিশদ বিবরণ নিয়ে কাজ করছে। সাধারণত আলোচনায় ‘টেকনিক্যাল টিম’র অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দেয় যে চুক্তির অপারেশনাল দিক নিয়ে আলোচনা চলছে।
ফলে ধারণা পাওয়া যায় যে, সামগ্রিক চুক্তি বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতির পর এ চুক্তির পর্যায়গুলি এবং সেই পর্যায়গুলির বিশদ নির্ধারণী আলোচনায় রয়েছে মিসরের যুদ্ধবিরতি আলোচনা।