২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫১:২৯ অপরাহ্ন


চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ!
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৪
চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ! চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ!


রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। গত ১০ বছরে আবাদ বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি ও চাষে কম খরচ হওয়ায় সরিষার উৎপাদন বাড়ছে। একই সাথে উৎপাদন করা হচ্ছে সরিষার মধু।

কৃষকরা বলছেন, কম খরচে সরিষা আবাদে বেশি লাভ। সাথে উৎপাদনও বাড়ছে অনেক। এছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। তিন ফসলি জমিতে চাষ আরও বেড়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা চাষ ও উৎপাদন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য কৃষককে প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলা ও মহানগরীর দুটি থানা সরিষার চাষ হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৪২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে।

এবছর গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে। এই উপজেলায় ২২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এরপরে বাগমারা উপজেলায় ১৮ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সরিষার আবাদ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ২১২ মেট্রিক টন। তানোর উপজেলার ১০ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।।

দুর্গাপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৭০ মেট্রিক টন। মোহনপুর উপজেলায় ৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন। পুঠিয়া উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে ৫ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। পবা উপজেলায় ৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন।

চারঘাট উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে এক হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮০ মেট্রিক টন। বাঘা উপজেলায় ৮৩৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০ মেট্রিক টন। রাজশাহী মহানগরীর নগরীর মতিহার থানায় সরিষা চাষ হয়েছে ২৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১০ মেট্রিক টন। বোয়ালিয়া থানায় ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন ধরা হয়েছে ১০ মেট্রিক টন।

গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে সরিষার দানা দোল খাচ্ছে। এসব এলাকার কৃষক বলছেন, কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় তারা সরিষা আবাদ করেন। এছাড়া আমদানীকৃত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরিষা তেলের চাহিদাও বেড়েছে। এজন্য এ অঞ্চলের কৃষক সরিষা চাষ করছেন।

গোদাগাড়ীর উদপুর গ্রামের গ্রামের কৃষক আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘গত বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলাম। ভালো দাম পাওয়ায় এবার ৯ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ছয় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষে ঝামেলা কম। এছাড়া সেচ দিতে হয় না। প্রথমে জমিতে হালচাষ করে সরিষার বীজ বপন করার পর একবার সার দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এবার বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার সরিষা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

কৃষকের দাবি, সারের দাম বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা খরচ বেশি হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি বিঘায় প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ আট মণ ফলন পাওয়া যায়।

তানোর উপজেলার গুবিরপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস সোবহান জানান, কয়েক বছর আগে আলুর আবাদ করতাম। আলু চাষ করে লোকসান হয়েছিল। তাই এবার সরিষার চাষ করেছি। অল্প সময়ে সরিষার ফলন পাওয়া যায়। খরচও কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গত ১০ বছরের সরিষার আবাদ ও উৎপাদনের তথ্য দিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ২০১২-১২ বছরে সরিষার আবাদ করা হয়েছিল ২০ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ সালে ১৯ হাজার ৮১১ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৩ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ সালে ১৯ হাজার ৬৯১ হেক্টর জমিতে আবার হয়েছিল ২৪ হাজার ৮৫৫ উৎপাদন হয়েছে। তবে এই সময় সরিষা থেকে মধু উৎপাদনের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

২০১৫-১৬ সালে ১৯ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। সরিষা থেকে মধু উৎপাদন করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৩০ কেজি। ২০১৬-১৭ সালে ১৯ হাজার ৪৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৮৫৪ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন করা করা হয়েছে ১০ হাজার ৫২৯ কেজি। ২০১৭-১৮ সালে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল ২৩ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৩৪০ কেজি। ২০১৮-১৯ সালে ২১ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়েছিল ২৯ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৪৫ কেজি।

২০১৯-২০ সালে ২৩ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৩০ কেজি। ২০২০-২১ সালে সরিষা আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন এছাড়াও মধু উৎপাদন হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৩৫ কেজি। ২০২১-২২ সালে ২৬ হাজার ১৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়েছে ৪০১ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন হয়েছিল ১২ হাজার ২৭৭ কেজি। ২০২২-২৩ সালে চাষে বিপ্লব ঘটে। এ বছরে সরিষা চাষে আগ্রহী হন কৃষকরা। ৪২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদন ৬৯ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন। মধু উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৬০ কেজি। ২০২৩-২৪ সালে সরিষা চাষ হয়েছে ৭৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সার বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমি নিজেও মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছি। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ফলে এ বছর সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। বেশকিছু এলাকায় সরিষা কাটাও শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেসব কৃষক সরিষা চাষ করছেন তাদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা সহজ ও অল্প খরচে চাষ করা যায়। জেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী বছরেও হবে।