২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৫৩:০৭ পূর্বাহ্ন


ভোট ঠেকাতে কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১২-২০২৩
ভোট ঠেকাতে কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি ভোট ঠেকাতে কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি


হরতাল-অবরোধে সীমাবদ্ধ না থেকে ফাঁকে ফাঁকে ভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। সামনের দুই সপ্তাহ সমাবেশ-মানববন্ধনের মতো আরো কয়েকটি কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত রাজপথে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখানোর পথ খোঁজা হচ্ছে। 

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের বাইরে থাকার চেষ্টা ছিল, কিন্তু নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে গ্রেপ্তার হচ্ছেন।

ফলে স্বাভাবিকভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না তাঁরা। তাই হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে অন্য কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবরোধ চলবে। এর ফাঁকে ফাঁকে ভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

গত সাত দিনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। এর বাইরে বিএনপির ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সব বৈঠকে হরতাল-অবরোধের বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর আর কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়েও নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

দলের কর্মকৌশল প্রণয়নে যুক্ত একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধ পালনে বিএনপি নেতাকর্মীদের চেয়ে সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা বেশি ছিল। কিন্তু টানা এক মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধ মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে শৈথিল্য এসেছে। অবরোধে শুধু ঝটিকা মিছিল রাজনীতিতে তেমন প্রভাবও ফেলতে পারছে না। তাই সমাবেশ, মানববন্ধন, গণমিছিলসহ কিছু জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের স্বজনদের ব্যানারে মানববন্ধন এবং শ্রমিক দলের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ হয়েছে। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশ শেষে ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনা দলের নেতাদের ভাবনায় ফেলে দেয়। একই ধরনের আরো কয়েকটি কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও চলতি সপ্তাহে সে পথে এগোয়নি বিএনপি। 

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১০ ডিসেম্বর রবিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘিরে সরকার ও প্রশাসন কী ধরনের আচরণ করে, তা দেখবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। কর্মসূচিতে তেমন বাধা না এলে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে আরো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ এবং সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করবে দলটি। এই দুই দিন হরতাল বা অবরোধ থাকবে না। জাতীয় দিবস পালনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে বিষয়েও নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ নিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধ ছাড়াও কর্মসূচি হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে। সমাবেশ-মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।  

প্রতীক বরাদ্দের পর ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করছে বিএনপি। এই সময়ে কিভাবে শক্তভাবে মাঠে থেকে হরতাল-অবরোধ কঠোরভাবে পালন করা হবে সে বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে বিএনপি। ওই সময় হরতাল-অবরোধের মধ্যে নির্বাচন কমিশনসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভসহ অন্য কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের পরামর্শ নিচ্ছে দলটি।

তবে নির্বাচন বর্জনকারী সব দলকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত এবং তাদের নিয়ে সর্বদলীয় আন্দোলন কমিটি করার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ চায় না দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গণতন্ত্র মঞ্চের আপত্তির কারণে এই প্রক্রিয়া এগোয় কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন যেভাবে চলছে, তা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।’ 

ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখনো হরতাল-অবরোধের পক্ষে মত দিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের যে কয়টি বৈঠক হয়েছে, সবটিতে বেশির ভাগ নেতা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দেন। তাঁরা মনে করেন, অন্য কোনো কর্মসূচি পালনের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা আপাতত হরতাল-অবরোধে বিরতি দেওয়ার পক্ষে। ৭ জানুয়ারি ভোট ঠেকানোর কর্মসূচি শক্তভাবে পালন করতে এখন নতুন করে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে মত দেন তাঁরা।

মঙ্গলবার এক দিন বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে এর আগে ৯ দফায় ১৮ দিন অবরোধ এবং তিন দফায় চার দিন হরতাল করেছে বিএনপি। সূত্র: কালের কণ্ঠ।