২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:১৫:৩৭ অপরাহ্ন


ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকের ন্যায্য মূল্য দিন
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২৩
ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকের ন্যায্য মূল্য দিন ফাইল ফটো


শ্রমিকদের জীবন ধারণের মতো মজুরি নির্ধারণ এবং শিল্পের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে তৈরি পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিদেশি ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে থাকে–এরকম সব ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকেই যাতে বর্ধিত দর কার্যকর করা হয় সে ব্যাপারে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতির বিস্তারিত এবং দর বাড়ানোর পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড বর্তমান পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনায় কাজ করছে। বোর্ড ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সভা করেছে এবং সংশ্লিস্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করছে। তারা কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। বিজিএমইএ অনুমান করছে, মজুরি তাদের ধারণার চেয়ে বেশি হতে পারে।

মূল্যস্ফীতি এবং শ্রমিকদের ওপর এর অভিঘাত সম্পর্কে ক্রেতাদের বিজিএমইএ জানিয়েছে, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। গত পাঁচ বছরের সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক হারে বেড়েছে। শিল্পের প্রাণ শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে বিবেচনা থেকেই এবারের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে এখন মূল্যস্ফীতি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, অন্যান্য খরচসহ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে চাপে আছে পোশাক খাত। পোশাকের প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি প্রশমনে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়েছে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পোশাকের চাহিদা কমেছে। একদিকে চাহিদা কমে আসা, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চিঠিতে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখা, শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও সর্বোপরি শ্রমিকদের জীবন ধারণের জন্য আগামী ডিসেম্বর থেকে যুক্তিসংগত মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। দর বৃদ্ধি নতুন ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রেতাদের উদ্দেশে চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ শিল্পে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কারখানার কর্মপরিবেশ এবং অবকাঠামো সংস্কারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন উদ্যেক্তারা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বস্বীকৃত অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। সামনের দিকে এগিয়ে চলার শিল্পের এই যাত্রায় বিজিএমইএ এসডিজি ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে এখন ২০২টি লিড সনদের পোশাক কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৭৩টি সর্বোচ্চ পয়েন্টের প্লাটিনাম-রেটেড। শিল্পে কার্বন নিগর্মন রোধকল্পে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সার্কুলারিটি গ্রহণের জন্য একটি সুস্পষ্ট সাসটেইনেবিলিটি রূপকল্প নিয়ে কাজ চলছে, যা শিল্পের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং মূল্যবোধের পরিপূরক।

কিছু বড় ব্র্যান্ডের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তারা বৃহৎ পরিসরে শিল্পের রূপান্তরের জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে কাজ করছে। সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো কাজে লাগানোর জন্য এ ধরনের সহযোগিতা আরও প্রয়োজন।

চিঠিতে ফারুক হাসান বলেন, কভিড-১৯ মহামারি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকেও সংকটে ফেলেছে। উদ্যোক্তাদের ধৈর্য, ক্রেতাদের অব্যাহত সহযোগিতা আর সরকারের নীতিসহায়তায় সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ মোকাবিলায় আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও একইভাবে দর সমন্বয় করে সহযোগিতা করবেন বলে আমি আশ্বস্ত হতে চাই। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের আগামীর যাত্রা আমরা চালিয়ে যেতে চাই।’