নাটোরের লালপুরের কদিমচিলানে বর্তমান এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের অনুসারীদের দ্বন্দ্বে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতাকে রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। রোববার সকালে উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া চিলান মোড়ের এ ঘটনায় নিহত ওসমান গণি (৪২) কদিমচিলান ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাঙ্গাপাড়া চিলান গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৯টার দিকে ওসমান গণি ডাঙ্গাপাড়া চিলান মোড়ে মোটরসাইকেলে পেট্রল নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় একই গ্রামের রেজাউল, আবদুল লতিফসহ আট থেকে দশজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা তার হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় আশপাশের লোকজন ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। ওসমান গণির মৃত্যু নিশ্চিত হলে হামলাকারীরা চলে যায়। তার লাশ সেখানেই পড়ে থাকে। পরে ওসমান গণির মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান।
এ ঘটনার পর সেখানে পালটা বড় ধরনের হামলা ও সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বলেন, উভয়পক্ষই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাদের পালটাপালটি হত্যার ঘটনায় আমরা আতঙ্কে আছি। নিহত ওসমান গণি এই আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য শহিদুল ইসলামের অনুসারী ছিলেন। তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় এটা পালটা খুনের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা একই আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আবুল কালামের অনুসারী বলে জানা গেছে।
নিহতের ভাই আফছার আলী বলেন, জানুয়ারিতে স্থানীয় কদিমচিলান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক খুন হন। ওই খুনের মামলায় নিহত ওসমান গণিকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলাটি এখনো চলমান। তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমরা বর্তমান সংসদ-সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের অনুসারী। অন্যদিকে, হামলাকারীরা সাবেক সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদের অনুসারী।
তিনি বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান খুনের পর থেকেই তার অনুসারীরা হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ সকালে আচমকা হামলা চালিয়ে রেজাউল, লতিফসহ কয়েকজন আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রেজাউল ও আবদুল লতিফ পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও বর্তমান এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এটা কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধে এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক খুন হয়। তার জের ধরেই আবার ওসমান গণি খুন হয়েছেন।
ঘটনার পর নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, গ্রামে এর আগে একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হয়েছিলেন। ওই ঘটনার জেরে আজ আরেকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে লালপুর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।