রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার কোনো চেষ্টাই যেন কাজে আসছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নগদ সহায়তা এবং উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগের পরও অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে না। বরং রপ্তানি আয়ে গুটি কয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর পাঁচটি পণ্য থেকে এসেছে মোট রপ্তানি আয়ের ৯১ দশমিক ৯১ শতাংশ। পণ্যগুলো হচ্ছে– তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পাঁচটি পণ্য থেকে এসেছিল ৯১ দশমিক ৭২ শতাংশ রপ্তানি আয়।
গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, রপ্তানিনীতি ও কাঠামোগত নানা সমস্যার কারণে পণ্য রপ্তানি বছর বছর আরও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা রপ্তানি খাতের সব পণ্যের জন্য উন্মুক্ত। বাস্তবে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য কোনো খাত এ সুবিধা নিতে পারে না। কারণ, এতসব কাগজপত্র চাওয়া হয় যে, অন্য খাতের অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে সেগুলো দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, পণ্যে বৈচিত্র্য চাইলে পণ্যভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
দেশে রপ্তানিসংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবায় কী ধরনের দুর্বলতা আছে, তা জানার চেষ্টা করছে ইপিবি। ইপিবির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেনাস কনসালটিং এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জরিপের ভিত্তিতে রপ্তানিসংক্রান্ত দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে ইপিবির পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, জরিপের সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রপ্তানিসংক্রান্ত নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। বিশেষ করে পণ্য উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার মতো সামর্থ্য নেই– এমন ক্ষুদ্র এবং অদক্ষ উদ্যোক্তাও খুব সহজে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন। ফলে রপ্তনি ঝুড়িতে অনেক পণ্য যুক্ত হবে। বৈচিত্র্য আসবে রপ্তানি খাতে।
রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোনো কোনো পণ্যে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইপিবির এক জেলা এক পণ্য, বিশেষ পণ্য উন্নয়ন, বিদেশে মেলা-প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াসহ আরো কিছু উদ্যোগ আছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ পণ্যের মধ্যে আবার তৈরি পোশাকের আধিপত্য একচেটিয়া। গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাকের হিস্যা ছিল ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ। প্রধান পাঁচ পণ্যের মধ্যে পোশাকের বাইরের বাকি চার পণ্যের হিস্যা কমেছে। এর মধ্যে মোট রপ্তানিতে হোম টেক্সটাইলের অংশ আগের অর্থবছরের ৩ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে কমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয়েছে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কৃষিপণ্যে এটি ২ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ২০ শতাংশ এবং পাট ও পাটপণ্যের ২ দশমিক ১৭ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতে রপ্তানি না বাড়লে গত অর্থবছরে রপ্তানি আগের অর্থবছরের চেয়ে কমে যেত। অর্থবছরের প্রথম দিকে সন্তোষজনক রপ্তানির কারণে গোটা অর্থবছরের গড় হিসাবে পোশাকের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পোশাকের রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো নয়।