০৪ মে ২০২৪, শনিবার, ০৭:১৩:৫১ পূর্বাহ্ন


পণ্য ডেলিভারি সিস্টেম বেসরকারি খাতে ছাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৩
পণ্য ডেলিভারি সিস্টেম বেসরকারি খাতে ছাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সময় সংবাদ


অবশেষে শেড এবং জেটি থেকে কনটেইনার ও পণ্য ডেলিভারি সিস্টেম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে এলসিএল কনটেইনার ডেলিভারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বে কার্গো নামে এক প্রতিষ্ঠানকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন পেলেই আগস্ট থেকে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সরেজমিন চিত্র বলছে, বিভিন্ন শেড থেকে পণ্য ডেলিভারি দিতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কনটেইনার খুলে পণ্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর শেড থেকে এসব পণ্য তোলা হয় ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানে। এভাবে শেড পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ হাজারের বেশি যেমন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ঢুকছে, তার সঙ্গে ২০ হাজারের বেশি ড্রাইভার ও হেলপার ঢুকছেন।

এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তা সংকটে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। কেননা, এই বন্দর ছাড়া বিশ্বের আর কোনো উন্নত বন্দরে এ ধরনের ডেলিভারি সিস্টেম নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
 
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর শুধু কনটেইনার লোড-আনলোড করবে এবং টার্মিনালে অপারেশনগুলো করবে। এ ছাড়া ডেলিভারির কাজ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো করবে।
 
নিরাপত্তা শঙ্কার পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেলিভারি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে এলসিএল ডেলিভারি সিস্টেম ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি খাতে। এই পদ্ধতিতে শেডের মধ্যেই কনটেইনার খুলে আমদানিকারকের পণ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়। বন্দর থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এরই মধ্যে বন্দরের জায়গা ভাড়া নিয়ে শেড তৈরির কাজও শুরু করেছে বে কার্গো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বন্ডেড এরিয়ার সনদ পেলেই কাজ শুরু করবে তারা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা কনটেইনার জেটি থেকে ডেলিভারির জন্য এই শেডে নিয়ে আসা হবে।
 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের এখানে ট্রাকের এলসিএল পার্ক হিসেবে এটি তৈরি করছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি পেলে কাজ শুরু করা হবে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত যে যানজট হতো, তা অনেকটা কমে আসবে। তা ছাড়া আমরা মাঝেমধ্যেই শেডে জায়গা স্বল্পতায় ভুগি, সেটিও আর থাকবে না।’
 
নানা জটিলতায় কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময়ই পণ্যগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। ডেলিভারির সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি ট্যারিফ না কমালে বেসরকারিকরণের সুফল আনবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
 
এ নিয়ে বিজিএমইএ-র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে যদি সময় বেশি লাগে, তাহলে এটি আমরা মেনে নেব না। তার মধ্যে যদি আবার খরচ বেড়ে যায়, তাহলে আমরা কিন্তু মেনে নিতে পারব না।’
 
তবে বন্দরের নির্ধারিত ট্যারিফই আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন বে কার্গো সেন্টারের মহাব্যবস্থাপক কাজী আশেক আহমেদ, ‘আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরও উন্নতমানের সেবা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। পাশাপাশি যত দ্রুত পণ্য ডেলিভারি করা যায়, আমরা সেটি নিশ্চিতেরও চেষ্টা করব। আমরা এ ক্ষেত্রে বন্দরের ট্যারিফ অনুসারে কাজ করব।’
 
পাঁচ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতার ইয়ার্ড এবং শেড ভাড়া নিয়ে বছরে অন্তত ৬০ হাজার কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিতে চায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বে কার্গো। তবে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। এর প্রায় অর্ধেক এলসিএল কনটেইনার।

দীর্ঘদিন ধরে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ছয় একর জায়গার একটি শেড পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এখন বেসরকারি উদ্যোগে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে ওই শেডটি। চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ করার জন্য প্রস্তাবিত এই শেডেই এখন সব ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালনা হবে।