সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলি বুধবার সুদানের এল ওবেইদ নগরীতে বোমাবর্ষণ করেছে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে দুই মাস ধরে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বের নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং তার প্রতিপক্ষ সাবেক ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান দাগলোর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যেকার এই শহুরে যুদ্ধে রাজধানী খার্তুমের পার্শ্ববর্তী গোটা এলাকা কার্যত: অচেনা হয়ে গেছে।
গত মাসের বেসরকারি উপাত্ত সংগ্রহকারি সংস্থা- আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, যুদ্ধ দ্রুত প্রদেশগুলিতে, বিশেষ করে দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় কমপক্ষে ১,৮০০ জন নিহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, নিয়মিত সেনাবাহিনী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, বুধবার প্রথমবারের মতো আরএসএফ বেষ্টিত উত্তর কর্ডোফান রাজ্যের রাজধানী এল ওবেইদে বিমান হামলা চালায়। এদিকে আরেক উত্তেজনায়, দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের গভর্নরকে হত্যা করা হলে, সেনাবাহিনী আরএসএফকে অভিযুক্ত করে এ হত্যাকে ‘নিষ্ঠুর কাজ’ বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, সারা দেশের প্রায় ২২ লাখ মানুষ বাস্তু-চ্যুত হয়ে পালিয়ে গেছে। বাস্তুহারাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি পালিয়েছে খার্তুম থেকে । জাতিসংঘ সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, তাদের মধ্যে ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় চেয়েছে। খার্তুমের বাসিন্দা আহমেদ ত্বহা এএফপিকে বলেছেন, যারা রয়ে গেছে- তাদের খাবার, পানি ও ওষুধ ফুরিয়ে গেছে।
উভয় পক্ষের স্পষ্ট লঙ্ঘনের মুখে একাধিক যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরে, মার্কিন ও সৌদি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা স্থবির হয়ে পড়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলি নিরাপদ মানবিক সাহায্যের করিডোর খোলার জন্য অনুমতি চাইলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। খার্তুমের গোটা এলাকা জুড়েই পানির লাইনে পানি নেই, সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ থাকে এবং যুদ্ধাঞ্চলের বেশিরভাগ হাসপাতাল অচল হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের মতে, জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি আড়াই কোটি মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় তহবিলের একটি ভগ্নাংশ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থা।
বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও অন্যান্য বাধা সত্ত্বেও, জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ১৮ লাখ মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছেছে, যা এখনও তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্যের একটি ভগ্নাংশ। খার্তুমের বাসিন্দা সোহা আবদুল রহমান বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমরা এই যুদ্ধের যন্ত্রণা ভোগ করছি এবং কষ্ট পাচ্ছি।’