রাজশাহীর মাস্টারপাড়া পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে আবারও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে-এমন খবরে গত দুই দিনেই দাম ১০ টাকা কমে কেজিতে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে কোনো কারণ ছাড়াই আবারও বেড়ে প্রতি কেজি ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার আগ পর্যন্ত দাম বাড়তে বাড়তে পাইকারিতেই কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। আর খুচরায় সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজ আমদানির খবরে বাজারে দাম দ্রুত কমার কথা, কিন্তু সেটি না হয়ে উল্টো দাম বেড়েছে। এ জন্য অবশ্য আমদানিকারকদের একটি চক্রই দায়ী। তাঁরা চাইছেন, সংকট প্রকট আকার দেখাতে পারলে দ্রুত আমদানির অনুমতি মিলবে। এখন সেই অপেক্ষায় আছেন ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারকরা।
আরও পড়ুন: পাইকারিতে কমল খোলা তেলের দাম
দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার আভাস দিয়েছেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। গত ১৪ মে সচিবালয়ে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে করণীয় নির্ধারণ বৈঠকের পর এমন আভাস দেন তিনি। এর পর থেকে অবশ্য এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করলেও এখনো অনুমতি মেলেনি।
আমদানিকারকরা চাইছেন, বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত অনুমতি নিতে। আর দেশের আড়তদার, পাইকারি হাটের ব্যবসায়ীরাও চান আরো কিছুদিন এভাবে চললে মুনাফাটা বেশি দিন ভোগ করতে পারবেন।
এই প্রতিযোগিতার মধ্যে কিন্তু ভোক্তাদেরই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এই পেঁয়াজ। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমদানি অনুমতির বিষয়টি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে, আমরা কার্যকর করি মাত্র। অনুমতির জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষায় আছি; যখনই আদেশ আসবে তখন থেকেই অনুমতি দেওয়া শুরু হবে। এরই মধ্যে অনেক আমদানিকারক আবেদন করে রেখেছেন। নতুন করে আবেদনের অপেক্ষায় আছেন অনেকেই।’
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুমতির ফাইলটি এখন ডেস্কে আছে; যেকোনো মুহূর্তে অনুমোদন মিলবে। আমরা শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পরামর্শ চাইছি।’
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গতকাল বাজারে এখন দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সংস্থাটির হিসেবে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়। সে হিসেবে এক মাসে দেশি পেঁয়াজের ৯৩ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বাজারে এখন আমদানি করা পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।
গত ১৪ মে কৃষি বিভাগের সভার তথ্য মতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। সংকটের সময় ভারত আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় বড় ধরনের বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে প্রণোদনা দিয়ে পেঁয়াজ চাষ ও উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর দাম বাড়তে থাকলে আমদানি অনুমতির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কবে নাগাদ সেটি কার্যকর হবে তার ঘোষণা আসেনি।