২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:৩১:৪৬ অপরাহ্ন


ক্লেপটোম্যানিয়া কী? কেন হয়?
ফারহানা জেরিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৩-২০২৩
ক্লেপটোম্যানিয়া কী? কেন হয়? ফাইল ফটো


একটি ছোট শিশু, তার স্কুলব্যাগের ছোট পকেট রাবার, জেল পেন, পেনসিল, ছোট পুতুলসহ নেলপলিশ, স্টিক আরো কত কিছুতে ভরা, কিন্তু একটিও তার নয়। সব স্কুলের সহপাঠীদের কাছ থেকে চুরি করা। যদিও তার অভাব নেই, তবু নিজের চোখ বা হাতের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজে দেখেও লজ্জা পায়, তবু করে। কেন করে সে জানে না। চুরি করলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। শুধু ওই শিশুটি নয়, ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে-নির্বিশেষে এই সমস্যার শিকার হতে পারে। এটি একটি রোগ। রোগটি কিন্তু খুব সাধারণ নয়, বরং বিরল ধরনেরই।

ভারতের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবীর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যদিও এই রোগটি কম বয়সে বা একটু বড় বয়সে রোগটি প্রকাশ পায়। তবে প্রাপ্ত বয়সে এসেও এটি হতে পারে। রোগটির নাম ক্লেপটোম্যানিয়া। প্রতি এক হাজারে তিন থেকে ছয়জন আক্রান্ত হয় এই রোগে।

ক্লেপটোম্যানিয়া: এটি একধরনের ডিস-অর্ডার। এ ধরনের মানুষ নিজের মনে কোথাও অবহেলিত বোধ করে। যদিও তাদের কোনো অভাব নেই। তবু চুপিসারে অন্যের জিনিস নিয়ে আসে তারা। কারো কাছে চাইতে হবে না, জিনিসের বিনিময়ে কিছু দিতে হবে না অথচ জিনিসটি সে পেয়ে যাবে এই বোধটা তাদের মানসিক শান্তি দেয়। যদিও পরে এটা নিয়ে তাদের চিন্তা হয়। যদি ধরা পড়ে যায়। কিন্তু ওই মুহূর্তে তারা নিজেদের আটকাতে পারে না।

ক্লেপটোম্যানিয়া হলে অন্যের জিনিস ক্রমাগত চুরির ইচ্ছা হয়। ক্লেপ্টোম্যানিয়া যাদের আছে তারা সচেতনভাবেই এই কাজ করে থাকেন। কিন্তু এ থেকে বের হতে পারে না কেউ। লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারের বড়রা প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। ছোটদের বকাবকি কিংবা মারধরও করেন, কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না।

ক্লেপটোম্যানিয়া কেন হয়?

রোগটা জেনেটিক হতে পারে এবং মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। আবার ক্লেপ্টোম্যানিয়ায় ভুগছেন এমন অনেক রোগীর চুরির কারণে অপরাধ বোধ, অবসাদ কিংবা নেশা করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। সেগুলোর জন্য আলাদা আলাদাভাবে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি এবং অন্যান্য সাইকোথেরাপি ক্লেপটোম্যানিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়।

ক্লেপটোম্যানিয়া কিন্তু চুরি নয়। কারণ যারা চুরি করে স্বেচ্ছায় এবং প্রয়োজনে তাদের অপরাধবোধ থাকে না। কিন্তু ক্লেপটোম্যানিয়ায় যারা ভুগছেন তারা চুরি করেন শুধু আনন্দ পাওয়ার জন্য। বাস্তব প্রয়োজনের জন্য নয়। সে কারণেই তাদের মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি হয়। যা সাধারণ চুরির ক্ষেত্রে হয় না।