২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৫৭:৫১ পূর্বাহ্ন


নারী থেকে পুরুষ হয়েও ‘মা’ হলেন জাহাদ
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০২-২০২৩
নারী থেকে পুরুষ হয়েও ‘মা’ হলেন জাহাদ নারী থেকে পুরুষ হয়েও ‘মা’ হলেন জাহাদ


সন্তানের জন্ম দিলেন রূপান্তরকামী জাহাদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আঙিনায় মাইলফলক তো বটেই, ভারতের সামাজিক ক্ষেত্রেও এ যেন এক অনন্য নজির হয়ে উঠল কেরলের এই ঘটনা।

কিছু দিন আগেই জানা গেছিল, কেরলের রূপান্তরকামী জুটি জিয়া ও জাহাদ ‘বাবা-মা’ হতে চলেছেন। এই জুটির মধ্যে জিয়া জন্মগতভাবে পুরুষ ছিলেন, যিনি পরে লিঙ্গ পাল্টে নারী হন। আবার জাহাদের জন্মগত লিঙ্গ পরিচয় ছিল নারী যিনি অস্ত্রোপচার করে পুরুষ হচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার আগেই তিনি প্রকৃতির নিয়মেই সন্তান ধারণ করেন গর্ভে। গতকাল, বুধবার জন্ম নিয়েছে সেই সন্তান। অর্থাৎ এখন সেই সন্তানের বায়োলজিক্যাল মা জাহাদ আসলে হবেন তার বাবা, এবং মা হবেন জিয়া, যিনি আগে পুরুষ ছিলেন।

তবে জিয়া-জাহাদের সদ্যোজাত এই সন্তানের লিঙ্গ কী, তা এখনও জানাননি তাঁরা।

কয়েক দিন ধরেই সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছে কেরলের এই জুটি। একজন শরীরে পুরুষ, কিন্তু মননে নারী। অন্যজন উল্টোটা। নারীজন্ম পেলেও নিজেকে পুরুষ ভাবতেই ভালবাসেন। পরস্পরের প্রেমে পড়ার পর শুরু হয়েছিল একসঙ্গে পথ চলা। 

দু’জনেই ঠিক করেছিলেন, হরমোন থেরাপি এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আস্তে আস্তে বদলে ফেলবেন জন্মগত লিঙ্গপরিচয়। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। তার মধ্যেই সন্তান নেবেন বলে ঠিক করেন রূপান্তরকামী দম্পতি। সেই মতোই লিঙ্গ পরিবর্তন প্রক্রিয়া মাঝপথে থামিয়ে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোকেই গুরুত্ব দেন দু’জনে। 

পুরোপুরিভাবে পুরুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগেই তাই গর্ভধারণ করেন নারী থেকে পুরুষ হতে চলা জাহাদ। বাহ্যিকভাবে নারীত্বের ছোঁয়া প্রায় মিলিয়ে গেলেও সন্তান ধরেন শরীরে।

তিন বছর আগে পরিচয় হয়েছিল কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা জাহাদ (২৩) এবং কোঝিকোড়ের বাসিন্দা জিয়া পাভালের (২১)। পরস্পরের প্রেমে পড়ার এক বছর পর থেকেই বাড়িঘর ত্যাগ করে কেরলের কোঝিকোড়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন দু’জনে। জাহাদ জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে নারী হলেও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষ হয়ে উঠতে চান। অন্যদিকে তাঁর সঙ্গী জিয়া এতদিন পুরুষ পরিচয়ে বেঁচেছেন। কিন্তু মননে তিনি একজন নারী, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে সেই পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার দিকেই এগোচ্ছেন তিনিও।

দু’জনেরই হরমোন থেরাপি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এমনকী, জাহাদের স্তন দুটিও অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়ে গেছে আগেই। জিয়া জানিয়েছেন, তাঁর এখনও হরমোন থেরাপি চলছে। সন্তানের বয়স ৬ মাস কিংবা এক বছর হওয়ার পর ফের হরমোন থেরাপি চালু করবেন জাহাদও।

সদ্য মা হওয়া জাহাদ পেশায় একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তবে বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে জিয়া নাচের শিক্ষিকা। নিজেদের রূপান্তরকামী পরিচয় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর দুজনেই পরিবার ছেড়ে চলে আসেন। শুরু হয় একসঙ্গে থাকা। তারপরেই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। 

দম্পতি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জাহাদের স্তন বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মেডিকেল কলেজের ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাঙ্ক থেকে দুধ নিয়ে সন্তানকে খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা।