২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:১৩:০৭ অপরাহ্ন


চাহিদা অনুসারে হচ্ছে না মসলার আমদানি
অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৩
চাহিদা অনুসারে হচ্ছে না মসলার আমদানি ফাইল ফটো


ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে চাহিদা অনুসারে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। শিগগির প্রয়োজনীয় এলসি খোলার ব্যবস্থা করা না হলে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। সেসঙ্গে মসলা আমদানিতে শুল্ক্ক কমানো দরকার।

গরম মসলার মূল্য এবং সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে গতকাল সোমবার এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রধান কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজার, কাপ্তান বাজার, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটের পাইকারি ও খুচরা মসলা ব্যবসায়ী এবং ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিসহ সংশ্নিষ্টরা অংশ নেন।

সভার শুরুতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে গরম মসলার বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জিরার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গরম মসলার বাজার যেন অস্থির না হয় সেজন্য সংশ্নিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ব্যবসায়ীদের পক্ষে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, দেশের মসলার বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কিন্তু অনেক ব্যাংক এখন মসলা আমদানির জন্য কোনো এলসি খুলতে চাইছে না। জিরাসহ বেশিরভাগ মসলা আফগানিস্তান, তুরস্ক ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে আফগানিস্তান ও তুরস্ক থেকে আমদানির জন্য কোনো এলসি খোলা যাচ্ছে না। শুধু ভারত থেকে জিরা আমদানি হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতেও জিরার দাম বেড়েছে। ভারত জিরা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় কিনা তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

তিনি বলেন, রমজানে গরম মসলার চাহিদা খুব বেশি থাকে না। তবে রমজানের দুই মাস পর কোরবানির ঈদ। তখন গরম মসলার চাহিদা থাকে বেশি। তখন একটা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এই মুহূর্তে যদি এলসি সমস্যার সমাধান করা না হয়, তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিনা কারণে বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানান আজমল হোসেন বাবু। তিনি বলেন, মসলার আমদানি শুল্ক্ক কমাতে হবে। বর্তমানে মসলাজাতীয় পণ্যে আমদানি শুল্ক্ক রয়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ।

নোয়াখালী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে দ্রুত দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা পর্যায়ে এখন জিরার দাম প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। অনেক সময় ডিলারদের কারসাজির কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম হঠাৎ করে এভাবে বেড়ে যায়। এতে লোকসানে পড়েন ছোট ব্যবসায়ীরা।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের সভাপতি লুৎফুর রহমান বাবর বলেন, মসলাজাতীয় পণ্যগুলোর বেশিরভাগই ১০০, ২০০ বা ২৫০ গ্রাম হিসেবে কেনেন ক্রেতারা। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা বেশি পড়ে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মুখপাত্র কাজী আবদুল হান্নান বলেন, ব্যাংকে বাড়তি টাকা দিলেই এলসি খোলা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি হলে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়ে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে দ্রুত এলসি সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, মসলার দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক্ক সমন্বয় করা জরুরি। নতুবা পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপে পড়বেন ভোক্তারা।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, রমজানকে সামনে রেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিত্যপণ্যের এলসি খোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও যদি মসলার ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক এলসি নিচ্ছে না, কেন নিচ্ছে না- সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানালে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে এলসির বিষয়গুলো নজরদারি করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, অসাধু উপায়ে যদি কেউ মসলার পণ্যের দাম বাড়ান, তাহলে বাজারে অভিযানের পাশাপাশি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়ালে অধিদপ্তর কোথাও অভিযান চালাবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

খাদ্যে ক্ষতিকর কাপড়ের রং মেশানোর অভিযোগ বিষয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, ফুডগ্রেড রংয়ের পরিবর্তে যদি কাপড়ের রং খাবারে মেশানো হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

এ ছাড়া পণ্যের মূল্যতালিকা, পাকা রসিদ, ক্রয়-বিক্রয় রসিদ ব্যবহারের আহ্বান জানান অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।