রাজস্ব খাতের বড় সংস্কার চান দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাঁরা ভয়ভীতিহীন কর অফিস দেখতে চান। আবার ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নীতিগুলো যেন ঘন ঘন পরিবর্তন করা না হয়, তা-ও চান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর আর কর দেওয়ার চাপ বাড়াবেন না।’ তাই করজাল সম্প্রসারণের সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া রাজস্ব আদায় ও রাজস্বনীতি প্রণয়ন—এ দুই প্রশাসনকে আলাদা করার জোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল সোমবার আয়করসংক্রান্ত সেমিনারের ব্যবসায়ীরা এসব দাবি জানান। এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ রাজস্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজস্ব খাত সংস্কারসহ আইএমএফ যে শর্তগুলো দিয়েছে, সেগুলো দেশের জন্য ভালো। তাই আইএমএফের শর্তে দ্বিমত করছি না। ভীতিকর পরিবেশ যাতে না হয়, সে জন্য করবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
ব্যবসায়ীরা যা চান
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘ভালো করদাতাদের ওপর বাড়তি করের জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। যাঁরা কর দেন না, তাঁদের খুঁজে বের করে কর আদায় করুন। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কোম্পানিগুলো রাজস্বের বড় অংশের জোগান দেয়। তাই শুধু কিছু কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হলে করব্যবস্থা টেকসই হবে না।’
নিহাদ কবীর আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের মতো লন্ডনে বসে কর আদায় করা হবে, এমন হলে হবে না। আলাপ–আলোচনা করে নীতি ঠিক করতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) কেন বলে দিতে হবে, রাজস্ব খাতে সংস্কার দরকার। আমাদের প্রয়োজনেই সংস্কার করতে হবে।’ রাজস্ব আদায় ও রাজস্বনীতি প্রণয়ন—এ দুই প্রশাসনকে আলাদা করার জোর দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এম এ মোমেন বলেন, নতুন কর আইন যদি ব্যবসাবান্ধব না হয়, তাহলে কোনো লাভ হবে না। আগামী বাজেটে অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য যা ভালো হয়, সে রকম করনীতি গ্রহণ করা উচিত। এতে ব্যবসায়ীরাও ভালো থাকবেন।
কর ছাড় দিলে ভালো কাজ হয়, এমন উদাহরণ দিলেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি আসিফ আশরাফ। পরিবেশবান্ধব কারখানায় কর ছাড়ের কারণে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কারখানা গড়ে উঠেছে এ দেশে। তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকি। কারণ, এ বছর মুনাফা করলে আগামী বছরও সমপরিমাণ কর দিতে হবে। কিন্তু আগামী বছর মুনাফার নিশ্চয়তা নেই।’
কর ছাড় উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, কর ফাঁকি রোধ করতে হবে।