তাঁরা যেন সত্যি সত্যিই ‘শক্তিমান’। একেক জনের আশ্চর্য ক্ষমতার কথা জানলে হতবাক হবেনই। কারও মগজাস্ত্র এতটাই ক্ষুরধার যে, এক ঝলক কোনও কিছু দেখেই তা দীর্ঘ দিন মনে রাখতে পারেন। আবার কেউ তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও ‘শর্টস’ পরেই ধ্যান করতে পারেন। কেউ আবার না খেয়েই দীর্ঘ দিন দিব্য বেঁচেছিলেন। কেউ তো পর্দার ‘স্পাইডারম্যানে’র মতোই তরতরিয়ে উঁচু বহুতলে উঠে ভেল্কি দেখান। বাস্তব জীবনের এমনই সব মহাশক্তিধরদের কাহিনি তুলে ধরা হল এখানে।
তাঁর নাম কিম পিক। তাঁর বুদ্ধিমত্তার কথা জানলে বিস্মিত হবেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ যেন তাঁর এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা। অটিজমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কোনও জিনিস দেখেই তা দীর্ঘ দিন মনে রাখতে পারতেন কিম।
আমেরিকার উটায় জন্ম কিমের। ডাস্টমিন হফম্যান ও টম ক্রুজ় অভিনীত ছবি ‘রেন ম্যান’ পিকের অনুপ্রেরণাতেই তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রয়াত হন কিম। মৃত্যুর পরও তাঁর এই অভাবনীয় ক্ষমতার কথা এখনও মনে রেখেছে এই দুনিয়া।
কিমের মতোই ‘সুপারপাওয়ার’ রয়েছে নেদারল্যান্ডসের উইম হফের। তাঁকে বলা হয় ‘আইসম্যান’। বরফের তলায় সাঁতার কাটা হোক কিংবা খালি পায়ে বরফের উপর দিয়ে দৌড়নো— সবেতেই পারদর্শী তিনি। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের যত নীচেই নামুক না কেন, তা অনায়াসে সইতে পারেন হফ।
রোগ নিরাময়ে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি বেশ চর্চিত। বরফের উপর শুধুমাত্র ‘শর্টস’ পরে বসে তাঁর ধ্যান করার ক্ষমতা দেখলে বিস্মিত হবেনই। তাঁর কথা বহু মানুষকে প্রেরণা জোগায়।
ভারতেও এক মহাশক্তিধরের হদিস পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর নাম প্রহ্লাদ জানী। তবে তিনি ‘মাতাজি‘ এবং ‘চুড়িওয়ালা মাতাজি’ নামে বেশি পরিচিত। মা অম্বার সাধক ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন জল ও খাবার না খেয়েই বেঁচেছিলেন ‘মাতাজি’।
কোনও সাধারণ মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে যদি খাবার ও জল না খান, তা হলে তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু দাবি করা হয়েছিল, প্রহ্লাদ দীর্ঘ দিন না খেয়েই বেঁচেছিলেন। এ কী ভাবে সম্ভব? এ নিয়ে এখনও রহস্য রয়েছে। ২০২০ সালে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
‘মানব ডলফিন’ কখনও দেখেছেন? ভাবছেন, এ আবার হয় নাকি! বেন আন্ডারউড ছিলেন ‘মানব ডলফিন’। তাঁর যখন মাত্র ৩ বছর বয়স, সেই সময় রেটিনায় বাসা বেঁধেছিল ক্যানসার। যার জেরে চোখ বাদ দেওয়া হয়েছিল বেনের।
চোখ না থাকার মতো প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমাতে পারেনি। খেলাধূলা থেকে শুরু করে বাইক চালানো এক জন স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবনযাপন করতেন বেন। ডলফিনের মতো ‘ইকোলোকেশনে’র ক্ষমতা ছিল বেনের। অর্থাৎ শব্দের প্রতিফলনের সাহায্যে কোনও বস্তুকে চিনতে পারতেন তিনি।
কিমের যেমন ‘ফটোগ্রাফিক মেমোরি’ ছিল, অর্থাৎ কিনা কোনও কিছু এক ঝলক দেখেই তা মনে রাখতে পারা। সে রকমই ক্ষমতার অধিকারী ব্রিটিশ স্থপতি স্টিফেন উইল্টশায়ার। কিমের মতো স্টিফেনও অটিজমে আক্রান্ত।
ছোট থেকেই আঁকার দিকে ঝোঁক ছিল স্টিফেনের। ৫ বছর বয়সে তাঁর মুখে কথা ফোটেনি। কিন্তু তখন নিজের ভাবপ্রকাশের জন্য হাতে তুলে নিয়েছিল কাগজ-কলম। কোনও জিনিস এক বার দেখেই তা দীর্ঘ দিন ধরে মনে রাখতে পারেন এই স্থপতি। তার পর সেই জিনিসটি নিখুঁত ভাবে আঁকতে পারেন।
নাম অ্যালিয়ান রবার্ট। তিনি যেন বাস্তবের ‘স্পাইডারম্যান’। যে কোনও উঁচু বহুতল বেয়ে তরতরিয়ে উঠে যেতে পারেন রবার্ট। সে কারণই তাঁকে বলা হয় ‘দ্য ফ্রেঞ্চ স্পাইডারম্যান’।
বুর্জ খলিফা, আইফেল টাওয়ার হোক কিংবা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং—স্পাইডারম্যানের মতো অনায়াসে উপরে উঠেছেন রবার্ট। এ জন্য বহু দেশে একাধিক বার গ্রেফতারও হয়েছেন রবার্ট।
শক্তিমানদের নানা কাহিনি বহু বার টিভি বা চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। কিন্তু বাস্তব জীবনেও যে মহাশক্তিধরদের অস্তিত্ব রয়েছে, তার সাক্ষী ওঁরা। তাঁদের কাহিনি এক বিস্ময়ের মতোই।