বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদি তহবিল থেকে নেয়া ঋণের সুদ হার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সুবাদে এ তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হার দাঁড়াবে ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ শতাংশ। সুদ হার গণনায় লাইবর হার যুক্ত করার বিষয়টিও তুলে নেয়া হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদি তহবিল ‘লং টার্ম ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটিজ’ (এলটিএফএফ) থেকে নেয়া ঋণের সুদ হার কমিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের সহায়তা প্রকল্পের (এফএসএসপি) আওতায় পরিচালিত এ তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হার দাঁড়াবে ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ শতাংশ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনকারী অথরাইজড ডিলারদের জানানো হয়েছে।
এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে সুদ হার গণনায় লাইবর হার যুক্ত করার বিষয়টিও তুলে নেয়া হয়েছে। আগে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে লাইবর (লন্ডনের আন্তঃব্যাংক সুদ হার)-এর সঙ্গে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ হার যোগ করা হতো।
সার্কুলারে বলা হয়, এলটিএফএফ তহবিলের ঋণের সুদ হার হবে ব্যাংকগুলোর জন্য মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। নতুন এ সুদ হার ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হার দাঁড়াবে ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ শতাংশ।
২০১৫ সালের জুনে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় এফএসএসপি প্রকল্পের অধীনে এলটিএফএফ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানো, উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন পেতে এ তহবিলের অর্থ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়।
ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল যোগান দিতে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলটি পরিচালনা করে আসছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে তহবিলের সুদ হারে পরিবর্তন আনা হয়। তখন লাইবরের সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে (৫, ৭ ও ১০ বছর) নেয়া ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ যুক্ত করে সুদ হার নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতো বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে আরও সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হার গুনতে হত ৮ শতাংশ পর্যন্ত।
সার্কুলার অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মান অনুযায়ী মেয়াদভেদে বিভিন্ন সুদ হার নির্ধারণ করা হবে। এজন্য বিবেচনায় নেয়া হবে ‘ক্যামেলস রেটিং’। যেসব ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং মান যত ভালো তারা তত কম সুদে ঋণ দিতে পারে। আর শুধু ১, ২ ও ৩ রেটিং মান পাওয়া ব্যাংকগুলো এফএসএসপি থেকে ঋণের জন্য অর্থ নিতে পারে।
ক্যামেলস রেটিংয়ে মান-১ পাওয়া ব্যাংকগুলো এখন পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ বিতরণ করবে ৩ শতাংশ সুদে। আগে তা ছিল লাইবর রেট (৫ দশমিক ১৪ শতাংশ) ও যোগ ২ শতাংশ। সাত বছর মেয়াদি ঋণ দেবে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে, আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ। ১০ বছরের অধিক মেয়াদি ঋণের সুদ হবে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা আগে ছিল লাইবর যোগ ২ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ।