২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৩:৩৩:৫৯ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার
শিক্ষা ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৩
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার


বাংলাদেশে মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সব রকম স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে। ২০১৭/১৮ সালে পরিবারগুলো সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন স্কুলে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করে।

গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। ব্র্যাক, ইউনেস্কোসহ ৯টি প্রতিষ্ঠান এ প্রতিবেদন প্রণয়নে যুক্ত ছিল।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শিক্ষা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবার ঋণ নেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়। ভুটান, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণকারীদেরকে স্বল্প সুদে ঋণের জন্য সরকারি শিক্ষার্থী ঋণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফির ওপর করারোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ফলস্বরূপ কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা ফির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই প্রতিবেদনের জন্য করা একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম ফি নেওয়া বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজারটি স্কুল শুধুমাত্র ফির উপর নির্ভর করে চলে। আফগানিস্তান, ভারত এবং নেপালের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ফির ওপর নির্ভরতা এবং সরকারি তহবিলের অভাবকে তাদের কর্মসূচির উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করে। আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের লক্ষ্য বেসরকারি স্কুলগুলোর জন্য পুঁজির প্রাপ্তি বৃদ্ধি করা। ভারতে সমীক্ষার অন্তর্ভূক্ত ৭৩ শতাংশ স্কুলের জন্য ঋণ দেওয়ার মতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা কঠিন ছিল, যদিও তিন চতুর্থাংশ স্কুলেরই তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়েছিল। ইদানিং ধর্মীয়, দাতব্য বা স্কুলে সমতার উদ্দেশ্য নিয়ে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রবেশ করছে। এডিফাই এবং অপরচুনিটি ইন্টারন্যাশনাল সবচেয়ে বড় শিক্ষা সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বল্প ফি নেওয়া বেসরকারি স্কুলকে প্রযুক্তি, চলতি মূলধন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য ঋণ দেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন- পাকিস্তানের কাশফ মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক স্কুলের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ব্যবসা প্রশাসনে মালিকানার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দিয়ে থাকে। পাকিস্তানের ২৫০টিরও বেশি গ্রামে বেসরকারি স্কুলকে দেওয়া শর্তহীন নগদ অনুদানের একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যখন একটি গ্রামের সব স্কুল অনুদান পায় তখন স্কুলগুলো প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য নিজেদের মানের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে।

গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয়, কোভিড-১৯ বেসরকারি স্কুলের অর্থের ওপর একটি বড় মূল্য আদায় করেছে। ভারতের ন্যাশনাল ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুলস্ অ্যালায়েন্স দেখেছে তাদের নেটওয়ার্কের তিন হাজার ৬৯০টি স্বল্প-ফি নেওয়া বেসরকারি স্কুলের মধ্যে ২০২০/২০২১ সালে মাত্র ৪ শতাংশ স্কুল ১০ শতাংশের বেশি ফি আদায় করতে পেরেছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই সমস্যা নিয়ে সরকারি প্রতিক্রিয়া ছিল অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশে সরকারি শিক্ষকরা তাদের বেতনসহ চাকরির নিরাপত্তা পেয়েছিলেন, কিন্তু এনজিও'র শিক্ষকরা তাদের বেতনের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পেতেন। পাকিস্তানে বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারীরা সরকারের কাছ থেকে কোন সহায়তাই পায়নি। শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি কার্যকলাপ নানা ধরণের ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বেসরকারি স্কুলগুলোর পরিচালনা, মালিকানা, অর্থায়ন, অনুপ্রেরণা, মুনাফার লক্ষ্য এবং ফি তাদের ধরণের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। তদুপরি, বেসরকারি অবদানকারীরা বিদ্যালয় পরিচালনার বাইরে অন্যান্য নানা ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে আছে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন এবং সম্পূরক পাঠদান; বিভিন্ন শিক্ষা স্তরে পাঠদান (অল্পবয়স্ক শিশুদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিদেশি ভাষা শেখা); এবং নানা মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার (তদাবির থেকে গবেষণা পর্যন্ত)।

গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে আরও বলা হয়, সমস্ত কার্যকলাপে বিভিন্ন বেসরকারি অবদানকারীদের দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। বিশেষত দ্রুত সাম্প্রতিক বিকাশের সঙ্গে বেসরকারি খাতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিতে। এ অঞ্চলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেসরকারি অবদানকারীদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ অঞ্চলের সরকারদের শিক্ষায় তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ নিজেদেরকে একমাত্র পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে দেখছেন এবং অন্যরা বেসরকারি খাত এবং সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের পদ্ধতিগুলোকে উৎসাহিত করতে এবং সহজতর করতে চাইছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ইরান, পাকিস্তান, ভুটান, এবং শ্রীলঙ্কার ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্বভার দুটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভাজিত, যা শিক্ষার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধাগ্রস্থ করছে।