দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের শূন্যপদ ৬০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে শূন্য পদ ৮০ শতাংশ ও কলেজ পর্যায়ে ২০ শতাংশ।
এদিকে যাচাই-বাছাইয়ে আটকা রয়েছে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার কথা ৫৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের নিয়োগ কার্যক্রম। এরই মধ্যে অনেক নিয়োগপ্রত্যাশীর বয়স শেষ হয়ে গেছে, অনেকের শেষের পথে। সব মিলিয়ে নিয়োগ না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান চলছে শিক্ষক ছাড়াই।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
নভেম্বরের মধ্যে চতুর্থ ধাপের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ঘোষণা দেয়া হলেও বর্তমানে সেটি ডিসেম্বরে প্রকাশের কথা জানিয়েছে এনটিআরসিএ। সেটি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে জানা যায়।
এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, চতুর্থ ধাপে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ২৬ জুন থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ, কারিগরি-মাদ্রাসা) শূন্যপদের তালিকা পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অনলাইনে চাহিদা তৈরি করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তালিকা পাঠান। সেটি উপজেলা থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর তালিকা পাঠানোর শেষ সময় ছিলো। এরপর সেটি এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরে যাচাই করা হয়। প্রায় দুই মাস পরে সেটি চূড়ান্ত করে ফের এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, সারাদেশ থেকে পাওয়া তালিকা চূড়ান্ত করে নভেম্বর মাসের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘোষণা দিলেও তাতে ব্যর্থ হয় এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় অনেক প্রার্থীর চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। অনেকের শেষের পথে। এতে নিয়োগপ্রত্যশীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। লাগাতার অনশন করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে শূন্যপদের তালিকা চাইলে ৬০ হাজারের বেশি চাহিদা পাওয়া যায়। সেসব সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠালে সেখান থেকে বেশ কিছু বাতিল করা হয়। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে যেখানে পদ শূন্য বা ভুল হলে তা লিখিতভাবে পাঠাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের আহ্বান করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে নতুন করে আরও কিছু পদ যুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে সেসব যাচাই-বাছাই চলছে।
তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে প্রাপ্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করতে তিন অধিদপ্তরে পাঠালেও সেখান থেকে ফেরত পাঠানোয় বিলম্ব করা হয়েছে। একাধিক আদালতে মামলা চলমান থাকায় গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও এ বিষয়ে আদালতের অনাপত্তি পেলে চলতি মাসের (ডিসেম্বর) মাঝামাঝি সময়ে নিবন্ধিত প্রার্থীদের কাছে আবেদন চেয়ে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এবার শুধু সুপারিশ করা হবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য। আগের পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
এনসিটিবির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবার আবেদন ফি এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। একজন প্রার্থী তার বিষয়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন সর্বোচ্চ ৪০টি। কেউ চাইলে একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারবেন। সেখানে নির্বাচিত না হলেও অন্য প্রতিষ্ঠানে মেধাতালিকায় নির্বাচন হলে তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। তবে কেউ একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলে তার নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেধাতালিকায় নির্বাচন হলে নিয়োগ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, আগে একজন প্রার্থী নিয়োগ নিশ্চিত করতে আলাদাভাবে শতাধিক পর্যন্ত আবেদন করতেন। এটি নিয়ে বির্তক ওঠায় চতুর্থ ধাপের নিয়োগে এ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবেদনের ক্ষেত্রে যেন ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের জন্য এনসিআরসিএ’র নিবন্ধিত প্রার্থীদের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সীরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এ পর্যন্ত এনটিআরসির ১ থেকে ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৯ জন নিবন্ধিত প্রার্থী রয়েছেন। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন। বর্তমানে ৩৫ বছরের নিচের প্রার্থী রয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৬ জন। তারা চতুর্থ ধাপে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এদিকে দ্রুত সময়ে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। সম্প্রতি এনটিআরসিএ’র সামনে প্রতীকী অনশন করেন। কর্মসূচিতে অংশ নেয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা বলেন, গত ১০ নভেম্বর এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দিয়েছিলো নভেম্বরের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে, কিন্তু সেই কথার বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে গণবিজ্ঞপ্তি না হওয়ায় অনেক নিবন্ধনধারীর বয়স শেষ হয়ে গেছে। অনেকের বয়স শেষের পথে। এর জন্য এনটিআরসিএ দায়ী।
এসময় তারা দ্রুত চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানান। একই সঙ্গে দাবি না আদায় হলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারিও দেন।