আগের চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত চাল পাওয়া নিশ্চিত করতে এবং আরো চাল আমদানির চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে একসঙ্গে তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। দেশ তিনটি হচ্ছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন চালের দাম কমছে। আর এই দেশগুলোতে ফসল ওঠায় এখন তাদের চাল রপ্তানির মূল সময়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাজারে খাদ্যশস্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং ভবিষ্যতের সরবরাহ ঠিক রাখার নির্দেশনা দেন। বৈঠকে চাল, গম, ভুট্টা, সার ও জ্বালানির আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী খাদ্যশস্য, বিশেষ করে দানাদার খাদ্যশস্যের সম্ভাব্য সব ধরনের আমদানি উৎস অনুসন্ধানে নির্দেশনা দেন। সামনের দিনে সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মজুদ আরো বাড়াতে আমদানির জন্য ডলার সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা এবং এলসি প্রক্রিয়া সহজতর করার নির্দেশনা দেন তিনি। এর আলোকে খাদ্য মন্ত্রণালয় নতুনভাবে কর্মপরিকল্পনা করছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বে আগামী ২১ নভেম্বর তিন দেশ সফরে যাবেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে মন্ত্রী ও খাদ্যসচিব তিনটি দেশই সফর করবেন। মন্ত্রণালয়ের ও খাদ্য অধিদপ্তরের বাকি কর্মকর্তারা ভাগ হয়ে একটি করে নির্দিষ্ট দেশে যাবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে (জিটুজি) পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি করা আছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে দুই লাখ টন করে, ভারত থেকে এক লাখ টন এবং ভিয়েতনাম থেকে ৩০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি আছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে এসেছে প্রায় ৯৩ হাজার টন চাল, যার পুরোটাই ভারত থেকে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে কোনো চাল এখনো এসে পৌঁছায়নি। এসব দেশ থেকে আমদানি চালের চালান আসতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তবে আমদানিতে যাতে আর দেরি না হয় সে জন্য সরাসরি থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম যাচ্ছেন মন্ত্রী ও সচিব। আর কম্বোডিয়া সফরের উদ্দেশ্য নতুন করে চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করা। মন্ত্রীর এই সফরও কম্বোডিয়া দিয়ে শুরু হচ্ছে।
দেশে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক আছে। এর পরও সরকার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। গত ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৫ লাখ ৮১ হাজার ১৬৬ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৩ টন, গম দুই লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টন এবং ধানের মজুদ ১২ হাজার ১৫৩ টন।
গত অর্থবছরের তুলনায় চালের আমদানি বেশ শ্লথ। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪১০ টন চাল আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারিভাবে ছিল ছয় লাখ ৮৩ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে তিন লাখ চার হাজার টন। যদিও চলতি অর্থবছরের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চালের আমদানি হয়েছে তিন লাখ এক হাজার ৪২০ টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৯৩ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে দুই লাখ আট হাজার টন এসেছে।
কোন দেশ থেকে কত টাকার চাল আমদানি
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিয়েতনামের চাল আমদানিতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশটিতে চালের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। ভারত থেকে দুই পদ্ধতিতে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিআইএফ-এলও টার্মে প্রতি টন চাল আমদানি ব্যয় ৪৪৩.৫০ ডলার এবং রেলপথে ৪২৮.৫০ ডলার। ভিয়েতনাম থেকে প্রতি টন সিদ্ধ চাল আমদানি করতে ব্যয় হচ্ছে ৫২১ ডলার। দেশটি থেকে ৩০ হাজার টন আতপ চালও কেনা হচ্ছে। প্রতি টনের দাম ৪৯৪ ডলার। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে প্রতি টন চাল আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৪৬৫.৫০ ডলার।
বেসরকারি পর্যায়ে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এসেছে মাত্র ৩৮ হাজার ৫০০ টন। গত ২০ অক্টোবর শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার মাধ্যমে নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সময়ে চার লাখ ৮৭ হাজার টন অনুমোদন দেওয়া হয়। চাল এসেছে প্রায় দুই লাখ আট হাজার টন।