পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। সেই বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও তরতর করে তুঙ্গে উঠেছিল। রেলের ইঞ্জিন ও ট্রেন কেনা, এমনকি করোনাকালে সুরক্ষাসামগ্রী কেনায়ও দুর্নীতি হয়। মেগাপ্রজেক্টগুলোতে ব্যয় বাড়িয়ে অর্থ লোপাটের মচ্ছব চলেছে।
পাল্লা দিয়েই দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া ছুটিয়েছেন একেকজন রেলমন্ত্রী। তাঁদের লুটপাটে লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই লাইনচ্যুত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই ১৬ বছরে রেলের উন্নয়নে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে শেষ হওয়া ৯৫ প্রকল্পেই ব্যয় হয় প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশন নেওয়া থেকে শুরু করে দরপত্র, নিয়োগ, বদলি, ইজারা বাণিজ্যও ছিল তুঙ্গে। এসব পথে আসা দুর্নীতির অর্থ রেলমন্ত্রী থেকে শুরু করে নিচের পর্যায়েও ভাগাভাগি চলত। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কৃষক ঘরের ছেলে মো. মুজিবুল হক বিলাসী হয়ে ওঠেন। বিয়ে করেছিলেন ৬৭ বছর বয়সেও।
কমিশন বাণিজ্যে সম্পদ বাড়ানোর পর নূরুল ইসলাম সুজনও রেলমন্ত্রী হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। পরে সেই স্ত্রীও দুর্নীতিতে জড়ান। আওয়ামী লীগ আমলের সর্বশেষ রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম দায়িত্ব পাবার সাত মাসের মধ্যেই গড়েছিলেন প্রকল্পে কমিশন তোলার শক্ত চক্র। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, এই তিন মন্ত্রীর আমলে বন্ধ হয় ৯৩টি ট্রেন। সুজনের আমলে ২০২৩ সালে ২৭৩ বার এবং ২০২২ সালে ২০৩ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল।
গত সরকারের আমলে বেশুমার দুর্নীতির ফলে রেলে লোকসান বাড়ছেই। এ ছাড়া সঠিক গতিতে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারকে তাই অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ কমলাপুর রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়েতে এক টাকা রোজগারের জন্য আড়াই টাকার মতো খরচ হয়। এটার পেছনে দুইটা কারণ—রেলের দুর্নীতি ও অপচয়। এ অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। রেলে বিভিন্ন সময়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক প্রভাব।
পতিত সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মো. মুজিবুল হক, মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও মো. জিল্লুল হাকিম। বেশি সময়ে দায়িত্ব পালন করেন মো. মুজিবুল হক ও মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। ২০১২ সাল থেকে রেলে একের পর এক মেগাপ্রজেক্ট নেওয়া শুরু হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর সুরঞ্জিত কৌতুকের সুরে বলেছিলেন, রেলে কালো বিড়াল আছে। সুরঞ্জিত মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তাঁর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারসহ রেলের আরো দুই কর্মকর্তা নিয়োগ বাণিজ্যের ৭০ লাখ টাকাসহ ঢাকায় ধরা পড়েন। পরে একই বছরের ১৬ এপ্রিল সুরঞ্জিত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি নূরুল ইসলাম সুজনকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি। দুর্নীতি এবং একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনার ফলে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নই হচ্ছিল। শেষে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রিত্ব হারান। সুজন মন্ত্রী হয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুলেট ট্রেন চালুর জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করান। অর্থ খরচ করা হলেও প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। যাচাই ছাড়াই অন্য অঞ্চলের ট্রেন বন্ধ করে নিজ নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে পাঁচটি আন্ত নগর ট্রেন চালু করেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে রেল ও কোচ সংস্কারের নামে ২০০ কোটি টাকার বেশির ভাগ অপচয় করা হয়। সেখান থেকে তিনি ও তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা কমিশন নেন। প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর জন্য ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে বাসভবন ও দপ্তরে বৈঠক করতেন। আখাউড়া-লাকসাম, দোহাজারী-কক্সবাজার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগসহ বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হতো তাঁর ফন্দিতেই। দরপত্র ছাড়াই তাঁর আমলে কেনাকাটা চলত। করোনাকালে পূর্বাঞ্চল রেলের জন্য দরপত্র ছাড়াই সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাঁদের বেশির ভাগের পদোন্নতি দেন সুজন। দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হলে রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমান ফারুকিকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে চার কোটি ৬৫ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। কেনাকাটার অনিয়মে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২১ কর্মকর্তা জড়িত উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। তবে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ১০ কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো পদোন্নতি দেন সুজন। সহজ ডটকম নামের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ঢেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে রেলে কাজ করার সুযোগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অযোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারির কাজ দেওয়ায় নিজেই তৎপর ছিলেন সুজন। কারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগেই তাঁর পাওনা ঠিক করে নিতেন। বড় প্রকল্পের কাজ দেওয়া হতো তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে। তমা কনস্ট্রাকশনের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তবে রেলে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে থাকতেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনিও সুজনকে প্রভাবিত করতেন। ২০২২ সালের ৫ জুন সুজন ৬৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন দিনাজপুরের মেয়ে শাম্মী আখতারকে। পরে শাম্মীও রেলের প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারদের কয়েকটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। সুজনকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
সুজনের আগে রেলমন্ত্রী ছিলেন মো. মুজিবুল হক। ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কৃষক পরিবারের সন্তান মুজিব রেলে ধাপে ধাপে দুর্নীতিতে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। তাঁর দায়িত্ব পালনের প্রায় সাত বছরে রেলে বেশির ভাগ প্রকল্প নেওয়া হয়। তিনিও ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতেন। রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া রেলপথ নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করে ম্যাক্স ও তমা। ২০১০ সালে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১০১ কোটি টাকা। শেষতক প্রকল্প ব্যয় ঠেকে দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। কাজ শেষ করা হয় ২০১৮ সালে। ব্যয় বাড়ানো হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ানোর কাজটি করিয়ে নেন মুজিব। সেই অর্থের বেশির ভাগই লোপাট হয়। এভাবে পাবনা-ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণ এবং চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সুবিধা নেন এবং ব্যয় বাড়িয়ে দেন। তাঁর সময়ে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটিতে। ১৪টি প্রকল্প নেওয়া হয় যথাযথ প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ছাড়াই। রেলমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের হনুফা আক্তার রিক্তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীর নামেও সম্পদ বাড়াতে তাঁর তৎপরতার কমতি ছিল না। স্থানীয় সূত্র জানায়, হনুফা সম্পদের লোভেই মুজিবকে বিয়ে করছিলেন। নির্বাচনী হলফনামায় ২০১৮ সালে মুজিবের বার্ষিক আয় দেখানো হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১১ টাকা। স্ত্রী হনুফার ছিল দুই কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা। ২০২৩ সালে হলফনামায় মুজিবের সম্পদ বেড়ে হয় চার কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। স্ত্রী হনুফার নামে দেখানো হয় চার কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। জানা গেছে, বিয়ের পর বিদেশবিলাসী হয়ে ওঠেন মুজিব। যেতেন সিঙ্গাপুর ও দুবাই। সাত বছরের মন্ত্রিত্বে কৃষক পরিবারের সন্তানের বহু কিছুই বাড়তে থাকে। কুমিল্লার কোটবাড়ীর কাছে আছে হোটেল ও ফিলিং স্টেশন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজারে কাকরি টাওয়ার নির্মাণ করিয়েছেন। কুমিল্লা নগরের কর ভবন এলাকায় আছে তাঁর ডুপ্লেক্স বাড়ি। নজরুল এভিনিউতে আছে বাণিজ্যিক ভবন। কুমিল্লায় নিজের বাড়ির কাছে দারুস সাফিদ ও সিলভার ক্রিসেন্ট ভবনে নিজের ও ভাতিজার নামে কিনেছেন কয়েকটি ফ্ল্যাট। আছে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আট হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, তিনটি বিলাসবহুল জিপগাড়ি, ঢাকা উদ্যানের কাছে চারতলা এবং আগারগাঁও শাপলা হাউজিংয়ে তিনতলা বাড়ি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও তাঁর স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মুজিবুল হক পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে সংগতিবিহীন সাত কোটি ৩৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৫১ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন। এ ছাড়া হনুফা আক্তার রিক্তা তাঁর স্বামীর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে তিন কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রাখেন বলে অভিযোগ করা হয়।
জিল্লুল হাকিম : ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজবাড়ীর এমপি জিল্লুল হাকিমকে। দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঠিকাদার, প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চক্র গড়েন। তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে তিন হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁর বিরুদ্ধে রেলের সম্পত্তি দখল, দরপত্র বাণিজ্য, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। ঢাকার উত্তরা, বনানী ও রাজবাড়ী শহরে বাড়ি, রাজবাড়ীর তিন উপজেলায় ৭০০ বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে তাঁর। ঢাকায় বনানী সুপারমার্কেটের কাছে অর্চার্ড হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিল্লুল, তাঁর স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও ছেলে আশিক মাহমুদের বিরুদ্ধে গত ১৬ জানুয়ারি মামলা করেছে দুদক। দুদক জানায়, এর মধ্যে জিল্লুল ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৮০৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
                           পাল্লা দিয়েই দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া ছুটিয়েছেন একেকজন রেলমন্ত্রী। তাঁদের লুটপাটে লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই লাইনচ্যুত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই ১৬ বছরে রেলের উন্নয়নে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে শেষ হওয়া ৯৫ প্রকল্পেই ব্যয় হয় প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশন নেওয়া থেকে শুরু করে দরপত্র, নিয়োগ, বদলি, ইজারা বাণিজ্যও ছিল তুঙ্গে। এসব পথে আসা দুর্নীতির অর্থ রেলমন্ত্রী থেকে শুরু করে নিচের পর্যায়েও ভাগাভাগি চলত। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কৃষক ঘরের ছেলে মো. মুজিবুল হক বিলাসী হয়ে ওঠেন। বিয়ে করেছিলেন ৬৭ বছর বয়সেও।
কমিশন বাণিজ্যে সম্পদ বাড়ানোর পর নূরুল ইসলাম সুজনও রেলমন্ত্রী হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। পরে সেই স্ত্রীও দুর্নীতিতে জড়ান। আওয়ামী লীগ আমলের সর্বশেষ রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম দায়িত্ব পাবার সাত মাসের মধ্যেই গড়েছিলেন প্রকল্পে কমিশন তোলার শক্ত চক্র। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, এই তিন মন্ত্রীর আমলে বন্ধ হয় ৯৩টি ট্রেন। সুজনের আমলে ২০২৩ সালে ২৭৩ বার এবং ২০২২ সালে ২০৩ বার ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল।
গত সরকারের আমলে বেশুমার দুর্নীতির ফলে রেলে লোকসান বাড়ছেই। এ ছাড়া সঠিক গতিতে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারকে তাই অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ কমলাপুর রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়েতে এক টাকা রোজগারের জন্য আড়াই টাকার মতো খরচ হয়। এটার পেছনে দুইটা কারণ—রেলের দুর্নীতি ও অপচয়। এ অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। রেলে বিভিন্ন সময়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক প্রভাব।
পতিত সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মো. মুজিবুল হক, মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও মো. জিল্লুল হাকিম। বেশি সময়ে দায়িত্ব পালন করেন মো. মুজিবুল হক ও মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। ২০১২ সাল থেকে রেলে একের পর এক মেগাপ্রজেক্ট নেওয়া শুরু হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর সুরঞ্জিত কৌতুকের সুরে বলেছিলেন, রেলে কালো বিড়াল আছে। সুরঞ্জিত মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তাঁর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারসহ রেলের আরো দুই কর্মকর্তা নিয়োগ বাণিজ্যের ৭০ লাখ টাকাসহ ঢাকায় ধরা পড়েন। পরে একই বছরের ১৬ এপ্রিল সুরঞ্জিত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি নূরুল ইসলাম সুজনকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি। দুর্নীতি এবং একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনার ফলে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নই হচ্ছিল। শেষে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রিত্ব হারান। সুজন মন্ত্রী হয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে বুলেট ট্রেন চালুর জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করান। অর্থ খরচ করা হলেও প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। যাচাই ছাড়াই অন্য অঞ্চলের ট্রেন বন্ধ করে নিজ নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড়ে পাঁচটি আন্ত নগর ট্রেন চালু করেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে রেল ও কোচ সংস্কারের নামে ২০০ কোটি টাকার বেশির ভাগ অপচয় করা হয়। সেখান থেকে তিনি ও তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা কমিশন নেন। প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর জন্য ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে বাসভবন ও দপ্তরে বৈঠক করতেন। আখাউড়া-লাকসাম, দোহাজারী-কক্সবাজার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগসহ বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হতো তাঁর ফন্দিতেই। দরপত্র ছাড়াই তাঁর আমলে কেনাকাটা চলত। করোনাকালে পূর্বাঞ্চল রেলের জন্য দরপত্র ছাড়াই সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাঁদের বেশির ভাগের পদোন্নতি দেন সুজন। দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হলে রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমান ফারুকিকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে চার কোটি ৬৫ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। কেনাকাটার অনিয়মে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২১ কর্মকর্তা জড়িত উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। তবে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ১০ কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো পদোন্নতি দেন সুজন। সহজ ডটকম নামের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ঢেকে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে রেলে কাজ করার সুযোগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অযোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারির কাজ দেওয়ায় নিজেই তৎপর ছিলেন সুজন। কারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগেই তাঁর পাওনা ঠিক করে নিতেন। বড় প্রকল্পের কাজ দেওয়া হতো তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে। তমা কনস্ট্রাকশনের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তবে রেলে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে থাকতেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনিও সুজনকে প্রভাবিত করতেন। ২০২২ সালের ৫ জুন সুজন ৬৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন দিনাজপুরের মেয়ে শাম্মী আখতারকে। পরে শাম্মীও রেলের প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারদের কয়েকটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। সুজনকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
সুজনের আগে রেলমন্ত্রী ছিলেন মো. মুজিবুল হক। ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কৃষক পরিবারের সন্তান মুজিব রেলে ধাপে ধাপে দুর্নীতিতে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। তাঁর দায়িত্ব পালনের প্রায় সাত বছরে রেলে বেশির ভাগ প্রকল্প নেওয়া হয়। তিনিও ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতেন। রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া রেলপথ নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করে ম্যাক্স ও তমা। ২০১০ সালে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১০১ কোটি টাকা। শেষতক প্রকল্প ব্যয় ঠেকে দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। কাজ শেষ করা হয় ২০১৮ সালে। ব্যয় বাড়ানো হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ানোর কাজটি করিয়ে নেন মুজিব। সেই অর্থের বেশির ভাগই লোপাট হয়। এভাবে পাবনা-ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণ এবং চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সুবিধা নেন এবং ব্যয় বাড়িয়ে দেন। তাঁর সময়ে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটিতে। ১৪টি প্রকল্প নেওয়া হয় যথাযথ প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ছাড়াই। রেলমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের হনুফা আক্তার রিক্তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীর নামেও সম্পদ বাড়াতে তাঁর তৎপরতার কমতি ছিল না। স্থানীয় সূত্র জানায়, হনুফা সম্পদের লোভেই মুজিবকে বিয়ে করছিলেন। নির্বাচনী হলফনামায় ২০১৮ সালে মুজিবের বার্ষিক আয় দেখানো হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭১১ টাকা। স্ত্রী হনুফার ছিল দুই কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৩ টাকা। ২০২৩ সালে হলফনামায় মুজিবের সম্পদ বেড়ে হয় চার কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। স্ত্রী হনুফার নামে দেখানো হয় চার কোটি ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। জানা গেছে, বিয়ের পর বিদেশবিলাসী হয়ে ওঠেন মুজিব। যেতেন সিঙ্গাপুর ও দুবাই। সাত বছরের মন্ত্রিত্বে কৃষক পরিবারের সন্তানের বহু কিছুই বাড়তে থাকে। কুমিল্লার কোটবাড়ীর কাছে আছে হোটেল ও ফিলিং স্টেশন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজারে কাকরি টাওয়ার নির্মাণ করিয়েছেন। কুমিল্লা নগরের কর ভবন এলাকায় আছে তাঁর ডুপ্লেক্স বাড়ি। নজরুল এভিনিউতে আছে বাণিজ্যিক ভবন। কুমিল্লায় নিজের বাড়ির কাছে দারুস সাফিদ ও সিলভার ক্রিসেন্ট ভবনে নিজের ও ভাতিজার নামে কিনেছেন কয়েকটি ফ্ল্যাট। আছে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আট হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, তিনটি বিলাসবহুল জিপগাড়ি, ঢাকা উদ্যানের কাছে চারতলা এবং আগারগাঁও শাপলা হাউজিংয়ে তিনতলা বাড়ি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও তাঁর স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মুজিবুল হক পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসর সঙ্গে সংগতিবিহীন সাত কোটি ৩৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৫১ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন। এ ছাড়া হনুফা আক্তার রিক্তা তাঁর স্বামীর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে তিন কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭৩ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রাখেন বলে অভিযোগ করা হয়।
জিল্লুল হাকিম : ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজবাড়ীর এমপি জিল্লুল হাকিমকে। দায়িত্ব নেওয়ার পরই ঠিকাদার, প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চক্র গড়েন। তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে তিন হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁর বিরুদ্ধে রেলের সম্পত্তি দখল, দরপত্র বাণিজ্য, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। ঢাকার উত্তরা, বনানী ও রাজবাড়ী শহরে বাড়ি, রাজবাড়ীর তিন উপজেলায় ৭০০ বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে তাঁর। ঢাকায় বনানী সুপারমার্কেটের কাছে অর্চার্ড হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিল্লুল, তাঁর স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও ছেলে আশিক মাহমুদের বিরুদ্ধে গত ১৬ জানুয়ারি মামলা করেছে দুদক। দুদক জানায়, এর মধ্যে জিল্লুল ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৮০৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
 
  অনলাইন ডেস্ক
 অনলাইন ডেস্ক  
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                