রানা শেখ, বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা পৌর এলাকার মিলিক বাঘা গ্রামে আগুনে পুড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত গৃহবধূ অনন্যা ওরফে মুন্নি (২৩) নামের এই তরুণীর মৃত্যুকে তার পরিবার ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করলেও, স্বামীর পরিবারের বক্তব্য—তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুন্নি মারা যান। এর আগের দিন ভোরে তার শরীরে আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে শোকে মুহ্যমান হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বাদ আসর নামাজের পর তাকে বাঘা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত মুন্নির মা মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার আগের দিন দুপুরে ফোনে মেয়ের সঙ্গে শেষ কথোপকথনে মুন্নি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “আমি আর নির্যাতনের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না মা।”
মুন্নির পরিবার জানায়, তার স্বামী সুরুজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং যৌতুকের জন্য চাপ দিতেন। প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন মুন্নি।
মুন্নির বাবা মাসুদ রানা বলেন, “আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। তার শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।”
ঘটনার বিবরণ ও বিরোধপূর্ণ দাবি
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। রাতেই মুন্নিকে তার শোবার ঘরে আগুনে জ্বলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে, শ্বশুর সহিদুল মাঝি দাবি করেছেন, “মুন্নি নিজেই ডিজেল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আমরা দরজা ভেঙে ঢুকে আগুন নেভাই।”
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য ভিন্ন। তারা জানান, ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মুন্নিকে পোড়া ও আংশিক বিবস্ত্র অবস্থায় লুঙ্গি দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখেছেন। তাদের মতে, ঘটনার সময় ঘরে আরও লোকজন ছিল এবং বিষয়টি “পরিকল্পিত” হতে পারে।
মুন্নির ভাই মিঠু জানান, ঘটনার দিনই তিনি বাঘা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৪৫) করেছেন এবং এখন হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রশ্ন রয়ে গেল—আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড?
মুন্নির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকের মতে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানোর চেষ্টা হতে পারে। অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন, মানসিক চাপে পড়ে মুন্নি হয়তো নিজের জীবন নিজেই শেষ করেছেন।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, এলাকাবাসী ও মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
রানা শেখ