রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মুন্নি খাতুন (২৮) নামে এক গৃহবধূ। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত মুন্নি বাঘা পৌরসভার চক নারায়ণপুর এলাকার সুরুজ আলীর স্ত্রী। তাদের ১১ ও চার বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে রাতের দিকে তারা নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর রাতে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য রাখা ডিজেল নিজের শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মুন্নি।
সুরুজ আলীর ভাতিজা সাব্বির আলী বলেন, “চাচা-চাচির মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ছিল। ভোরে চাচি নিজে শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন দেন। তার চিৎকারে চাচা ঘুম থেকে উঠে পানি ঢেলে আগুন নেভান। প্রতিবেশীরাও এসে সাহায্য করেন। এরপর দ্রুত তাকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।”
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. অখিল পাল বলেন, “রোগীকে হাসপাতালে আনা হলে তার শরীরের বড় অংশই পুড়ে গিয়েছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শঙ্কর কুমার বিশ্বাস বলেন, “মুন্নিকে সকালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তার স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে আবার বিকেলে তাকে রামেকে ফিরিয়ে আনা হয়। জরুরি বিভাগে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
মুন্নির মরদেহ বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা হিসেবে ধারণা করা হলেও পারিবারিক কলহের কারণ ও পেছনের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
হঠাৎ মুন্নির মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মুন্নি শান্ত স্বভাবের নারী ছিলেন। পারিবারিক অশান্তির কারণেই তিনি এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন।
একজন মা—যিনি রেখে গেলেন দুই সন্তান ও এক নিস্তব্ধ পরিবার। আগুনের শিখা নিভলেও, প্রশ্ন রয়ে গেল—একজন নারীকে কেন এমন পরিণতির দিকে ঠেলে দিল তার সংসার?
রানা শেখ