সম্প্রতি কেবিসি-তে অমিতাভ বচ্চনের 'মুখে মুখে কথা' বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ন'বছরের ইশিত। কথা হচ্ছে তার বাবা-মায়ের ভূমিকা নিয়েও।
কিন্তু পেরেন্টিং বিষয়টা তো কোনও ছকে বেঁধে হয় না। অফিসের চাপ, সংসারের দায়িত্ব আর তার সঙ্গে সন্তানের যত্ন- সব মিলিয়ে আজকের পেরেন্টিং অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই বাচ্চারা এমনিতেই চঞ্চল - দুষ্টুমি করে, আবার কখনও অবাধ্যও হয়।
সাধারণত একটা কঠোর চোখের দৃষ্টিই তাদের চুপ করিয়ে দেয়। কিন্তু এমন ‘গম্ভীর’ ভাবমূর্তি অনেক সময়েই সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। সেই দূরত্ব মেটাতে এবং সম্পর্কটা আরও মজায় ভরিয়ে তুলতে পারেন এক নতুন পেরেন্টিং কৌশল দিয়ে, নাম তার ‘কিডাল্টিং’।
মনোবিদ সৌমি চক্রবর্তীর কথায়, 'কেবিসির ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে বাচ্চাটাকে তো দায়ী করা যায় না। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত, অতটা সময় দিতে পারছেন না। অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে ক্রেশে থাকে। ঠিকঠাক গাইডেন্স পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে অনেক সময় যে বাবা-মাকে দোষ দেওয়া যায়, তাও নয়। তাদেরও নিজস্ব কেরিয়ার আছে। কিন্তু এখানেও দরকার একটা ব্যালেন্স তৈরি করা চেষ্টা করা।'
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কিডাল্টিং এখনকার ব্যস্ত জীবনে কার্যকর এক 'মজার পেরেন্টিং ট্রিক'।
‘কিডাল্টিং’ মানে, যখন বড়রা সচেতনভাবে নিজেদের ভেতরের শিশুসুলভ আচরণ জাগিয়ে তোলেন — যেমন বোর্ড গেম খেলা, আঁকিবুঁকি করা বা নিছক মজার কিছু অ্যাক্টিভিটিতে জড়িয়ে পড়া। বাবা-মা'দের ক্ষেত্রে এটি সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার এক কার্যকর উপায়।
কেন কিডাল্টিং আজকের দিনে এত প্রাধান্য পাচ্ছে?
চেন্নাইয়ের সিমস হাসপাতালের সিনিয়র সাইকিয়াট্রি কনসালট্যান্ট পদ্মা প্রিয়া জানিয়েছেন, কিডাল্টিং অভিভাবক ও সন্তানের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। তিনি বলেন, “যখন মা-বাবা নিজের ভিতরের শিশুটিকে তাঁদের সন্তানদের সামনে তুলে ধরেন - যেমন বোর্ড গেম খেলা, ছবি আঁকা বা নিছক মজার কিছু করা - তখন সন্তানরা নিরাপদ ও ভালবাসায় ঘেরা এক পরিবেশে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে।”
ডাঃ প্রিয়া আরও বলেন, অনেক সময় বাবা-মায়েরা সন্তানদের সামনে নিজেদের কঠোরভাবে প্রকাশ করতে চান। এতে শিশুরা বাধ্য হয়ে চলে ঠিকই, কিন্তু মনে ভয় কাজ করে। অন্যদিকে, যখন অভিভাবকরা কিছুটা মজাদার, হালকা মেজাজে থাকেন, তখন সন্তানরা সহজে মন খুলে কথা বলতে পারে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সব সময় খেলায় মেতে থাকলেই চলবে না। ডিসিপ্লিন, ঘুম, খাবারের মতো দায়িত্বও পালন করতে হবে। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য মজা পুরো সম্পর্কটাকেই আরও মজবুত করে।”
শুধু সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে নয়, অফিসে কাজের চাপের মাঝেও ছোট ছোট 'কিডাল্টিং' মুহূর্ত স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
৫ সহজ উপায়ে অভিভাবকরা সহজেই ‘কিডাল্টিং’কে নিজেদের জীবনে নিয়ে আসতে পারেন —
স্ট্রেস কমাতে ছোট ‘প্লে ব্রেক’
দিনে কয়েক মিনিট সময় রাখুন ছোটখাট ব্রেকের জন্য - যেমন ৫ মিনিট আঁকিবুঁকি করলেন, পাজল মেলানো বা টেবিল টেনিসের ছোট রাউন্ড। সন্তানদের সঙ্গে খেলায় যোগ দিন, একটা ছোট দৌড়ঝাঁপ-হুড়োহুড়ির মুহূর্ত, খেলা মন ও শরীর সতেজ রাখে।
হাতে-কলমে ক্রিয়েটিভ কোনও কাজ
সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় দিন সন্তানদের, যেদিন হয়তো বসে তাদের সঙ্গে কিছু বানালেন - যেমন ব্লক সাজানো, ছবি আঁকা বা ক্রাফট তৈরি করা।
টিম বানিয়ে খেলা বা অ্যাক্টিভিটি
বন্ধু, সহকর্মী বা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত বোর্ড গেম নাইট, সিনেমা ম্যারাথন বা থিম স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট আয়োজন করুন।
বাচ্চা ও বড়, দু’জনেরই জন্য স্থানীয় কমিউনিটি গ্রুপে যোগ দিতে পারেন - কমিক বুক ক্লাব, গাছ লাগানো ক্লাব বা টয় এক্সচেঞ্জ সেশন।
‘নস্টালজিয়া কর্নার’ তৈরি করুন
বাড়ি বা অফিসে একটা ছোট জায়গা রাখুন যেখানে থাকবে ছোটবেলার প্রিয় খেলনা, স্ন্যাকস বা গান, যা সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
এই নস্টালজিয়া মনকে শান্ত করে এবং অনিশ্চয়তার সময়ে একটুকরো স্থিরতা দেয়।
বাচ্চাদের জন্যও বাড়িতে একটা ছোট কর্নার তৈরি করে দিতে পারেন। সেখানে সে তার ভাল-খারাপ সময় কাটাতে পারে। পছন্দের হবি নিয়ে বসতে পারে।
মনোযোগী ‘ইমার্সিভ প্লে’
দিনে সামান্য সময় রাখুন এমন খেলায় যেখানে মনোযোগ বসানোটাই আসল খেলা। জিগস পাজল, গার্ডেনিং বা রঙ করার বই।
সন্তানদের সঙ্গে যখন এরকম কোনও অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবেন ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখুন।
কিডাল্টিং তাই এখন শুধুই মজার নয়, বরং এক ধরনের সচেতন পেরেন্টিং, যেখানে হাসি-খুশি মিশে যায় দায়িত্ববোধের সঙ্গে।
কিন্তু পেরেন্টিং বিষয়টা তো কোনও ছকে বেঁধে হয় না। অফিসের চাপ, সংসারের দায়িত্ব আর তার সঙ্গে সন্তানের যত্ন- সব মিলিয়ে আজকের পেরেন্টিং অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই বাচ্চারা এমনিতেই চঞ্চল - দুষ্টুমি করে, আবার কখনও অবাধ্যও হয়।
সাধারণত একটা কঠোর চোখের দৃষ্টিই তাদের চুপ করিয়ে দেয়। কিন্তু এমন ‘গম্ভীর’ ভাবমূর্তি অনেক সময়েই সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। সেই দূরত্ব মেটাতে এবং সম্পর্কটা আরও মজায় ভরিয়ে তুলতে পারেন এক নতুন পেরেন্টিং কৌশল দিয়ে, নাম তার ‘কিডাল্টিং’।
মনোবিদ সৌমি চক্রবর্তীর কথায়, 'কেবিসির ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে বাচ্চাটাকে তো দায়ী করা যায় না। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত, অতটা সময় দিতে পারছেন না। অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে ক্রেশে থাকে। ঠিকঠাক গাইডেন্স পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে অনেক সময় যে বাবা-মাকে দোষ দেওয়া যায়, তাও নয়। তাদেরও নিজস্ব কেরিয়ার আছে। কিন্তু এখানেও দরকার একটা ব্যালেন্স তৈরি করা চেষ্টা করা।'
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কিডাল্টিং এখনকার ব্যস্ত জীবনে কার্যকর এক 'মজার পেরেন্টিং ট্রিক'।
‘কিডাল্টিং’ মানে, যখন বড়রা সচেতনভাবে নিজেদের ভেতরের শিশুসুলভ আচরণ জাগিয়ে তোলেন — যেমন বোর্ড গেম খেলা, আঁকিবুঁকি করা বা নিছক মজার কিছু অ্যাক্টিভিটিতে জড়িয়ে পড়া। বাবা-মা'দের ক্ষেত্রে এটি সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার এক কার্যকর উপায়।
কেন কিডাল্টিং আজকের দিনে এত প্রাধান্য পাচ্ছে?
চেন্নাইয়ের সিমস হাসপাতালের সিনিয়র সাইকিয়াট্রি কনসালট্যান্ট পদ্মা প্রিয়া জানিয়েছেন, কিডাল্টিং অভিভাবক ও সন্তানের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। তিনি বলেন, “যখন মা-বাবা নিজের ভিতরের শিশুটিকে তাঁদের সন্তানদের সামনে তুলে ধরেন - যেমন বোর্ড গেম খেলা, ছবি আঁকা বা নিছক মজার কিছু করা - তখন সন্তানরা নিরাপদ ও ভালবাসায় ঘেরা এক পরিবেশে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে।”
ডাঃ প্রিয়া আরও বলেন, অনেক সময় বাবা-মায়েরা সন্তানদের সামনে নিজেদের কঠোরভাবে প্রকাশ করতে চান। এতে শিশুরা বাধ্য হয়ে চলে ঠিকই, কিন্তু মনে ভয় কাজ করে। অন্যদিকে, যখন অভিভাবকরা কিছুটা মজাদার, হালকা মেজাজে থাকেন, তখন সন্তানরা সহজে মন খুলে কথা বলতে পারে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সব সময় খেলায় মেতে থাকলেই চলবে না। ডিসিপ্লিন, ঘুম, খাবারের মতো দায়িত্বও পালন করতে হবে। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য মজা পুরো সম্পর্কটাকেই আরও মজবুত করে।”
শুধু সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে নয়, অফিসে কাজের চাপের মাঝেও ছোট ছোট 'কিডাল্টিং' মুহূর্ত স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
৫ সহজ উপায়ে অভিভাবকরা সহজেই ‘কিডাল্টিং’কে নিজেদের জীবনে নিয়ে আসতে পারেন —
স্ট্রেস কমাতে ছোট ‘প্লে ব্রেক’
দিনে কয়েক মিনিট সময় রাখুন ছোটখাট ব্রেকের জন্য - যেমন ৫ মিনিট আঁকিবুঁকি করলেন, পাজল মেলানো বা টেবিল টেনিসের ছোট রাউন্ড। সন্তানদের সঙ্গে খেলায় যোগ দিন, একটা ছোট দৌড়ঝাঁপ-হুড়োহুড়ির মুহূর্ত, খেলা মন ও শরীর সতেজ রাখে।
হাতে-কলমে ক্রিয়েটিভ কোনও কাজ
সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় দিন সন্তানদের, যেদিন হয়তো বসে তাদের সঙ্গে কিছু বানালেন - যেমন ব্লক সাজানো, ছবি আঁকা বা ক্রাফট তৈরি করা।
টিম বানিয়ে খেলা বা অ্যাক্টিভিটি
বন্ধু, সহকর্মী বা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত বোর্ড গেম নাইট, সিনেমা ম্যারাথন বা থিম স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট আয়োজন করুন।
বাচ্চা ও বড়, দু’জনেরই জন্য স্থানীয় কমিউনিটি গ্রুপে যোগ দিতে পারেন - কমিক বুক ক্লাব, গাছ লাগানো ক্লাব বা টয় এক্সচেঞ্জ সেশন।
‘নস্টালজিয়া কর্নার’ তৈরি করুন
বাড়ি বা অফিসে একটা ছোট জায়গা রাখুন যেখানে থাকবে ছোটবেলার প্রিয় খেলনা, স্ন্যাকস বা গান, যা সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
এই নস্টালজিয়া মনকে শান্ত করে এবং অনিশ্চয়তার সময়ে একটুকরো স্থিরতা দেয়।
বাচ্চাদের জন্যও বাড়িতে একটা ছোট কর্নার তৈরি করে দিতে পারেন। সেখানে সে তার ভাল-খারাপ সময় কাটাতে পারে। পছন্দের হবি নিয়ে বসতে পারে।
মনোযোগী ‘ইমার্সিভ প্লে’
দিনে সামান্য সময় রাখুন এমন খেলায় যেখানে মনোযোগ বসানোটাই আসল খেলা। জিগস পাজল, গার্ডেনিং বা রঙ করার বই।
সন্তানদের সঙ্গে যখন এরকম কোনও অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবেন ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখুন।
কিডাল্টিং তাই এখন শুধুই মজার নয়, বরং এক ধরনের সচেতন পেরেন্টিং, যেখানে হাসি-খুশি মিশে যায় দায়িত্ববোধের সঙ্গে।