ঢাকা , সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫ , ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কারাগারে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ, ইতালিতে চালু হলো ‘সেক্স রুম’ নওগাঁয় ঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত; জেলের মৃত্যু ভোলাহাটে সাপের কামড়ে একই দিনে ২ জনের মৃত্যু পুরুষগণ আল্লাহ প্রদত্ত এক অশেষ নেয়ামত রাজশাহীর শতবর্ষী বৃক্ষ রক্ষায় স্মারকলিপি প্রদান: প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়নের দাবি রাজশাহীতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত রাজশাহীতে ভুল চিকিৎসায় গর্ভবতী গাভীর মৃত্যু, পশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের নীলফামারীতে এক মিনিট স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড ২০টি গ্রাম নিয়ামতপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন জঙ্গল সলিমপুরে দুই সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা দার্জিলিংয়ে রাতভর বৃষ্টি ও ভূমিধসে নিহত ১৪ পিঠ-কোমরের ব্যথা নির্মূল হয় একটি বিশেষ আসনে, পদ্ধতি শেখালেন নিকিতা শরীরের খিদে মেটাতে কর্ণকে ‘ব্যবহার’ করেছিলেন অনুষা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের শুভেচ্ছা বিনিময় রাণীনগরে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ: জয়শূন্য ব্রাজিলের বিদায়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুখবর দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ট্রাম্পের আহ্বানের পরও ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭০ ধানমন্ডি লেক থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার এবার দল হিসেবে আ.লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হচ্ছে: চিফ প্রসিকিউটর

হাসিনার আমলে কোটি কোটি ডলার পাচারের কাহিনী: ফিনান্সিয়াল টাইমসের ডকুমেন্টারি

  • আপলোড সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০১:৪৩:২৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০১:৪৩:২৮ অপরাহ্ন
হাসিনার আমলে কোটি কোটি ডলার পাচারের কাহিনী: ফিনান্সিয়াল টাইমসের ডকুমেন্টারি ছবি- সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন সেই অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিলেও কাজটি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক নতুন ডকুমেন্টারিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে। “বাংলাদেশ’স মিসিং বিলিয়নস, স্টোলেন ইন প্লেইন সাইট” ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ওই ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ করে ফিনান্সিয়াল টাইমস।

ডকুমেন্টারিতে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা অংশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—এত বিপুল অর্থ কীভাবে বিদেশে চলে গেল এবং আদৌ তা ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না।

ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে শেখ হাসিনার সরকার সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা প্রস্তাব আনে। আর এতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্মীয়দের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ চরমে পৌঁছে। তখনই শুরু হয় ছাত্রদের নেতৃত্বে তীব্র বিক্ষোভ, আর বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন বাড়াতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকার রাস্তায় এখনও বিদ্রোহী গ্রাফিতি ও প্রতিবাদী দেয়ালচিত্র দেখা যায়— যা হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনের সাক্ষ্য বহন করে।

আন্দোলনের সমন্বয়ক রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, প্রথম দিকে পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ হয়নি। তবে ১৪ জুলাই পুলিশ ব্যারিকেড বসায় ও প্রতিবাদ দমন শুরু করে। আরেক সমন্বয়ক রিজওয়ান আহমেদ রিফাত জানান, পুলিশ ও সরকারি সন্ত্রাসীরা গুলি, স্নাইপার শট এমনকি হেলিকপ্টার থেকে শেল নিক্ষেপ করে।

পরিস্থিতির মোড় ঘোরে ৫ আগস্ট। ওই দিন নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

জাতিসংঘের হিসাবে, আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। হাজারো মানুষ নিখোঁজ বা আহত হন। হাসিনার সমর্থকেরা এখনো এসব সহিংসতায় তার ভূমিকা অস্বীকার করে।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচার
হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ মহলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ ছিল। ধারণা করা হয়, এসব অর্থের বড় অংশই যুক্তরাজ্যে গেছে।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি নজরদারি সংস্থাগুলো বলছে, যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট বাজার দুর্নীতিবাজদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য। ফলে যুক্তরাজ্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অর্থপাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।

শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার পরিবারও বিতর্কে জড়ায়। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ছিলেন এবং সম্প্রতি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় অভিযোগ উঠেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যরা বড় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। টিউলিপ সিদ্দিকও তদন্তের মুখে পড়েন এবং পরে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে। ব্রিটিশ অপরাধ দমন সংস্থা (এসসিএ) ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫০ সম্পত্তি জব্দ করেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অনুমান করছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯–২০২৩) প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।

ব্যাংক দখল ও লুটপাট
শেখ হাসিনার সাবেক শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠরা সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে। অনেক ব্যাংক পরিচালককে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

এরপর ওই ব্যাংক থেকে নিজেদের স্বার্থে হাজার কোটি টাকার ভুয়া ঋণ দেওয়া হয়। এসব অর্থের বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় লুটতরাজ। এক অনুমান অনুযায়ী, ব্যাংক ও ব্যবসা খাত থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনার পরিবারের কথিত বিদেশি সম্পদ ও অফশোর অ্যাকাউন্ট নিয়েও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এসব লুট হওয়া অর্থ মূলত অতিরিক্ত বা কম ইনভয়েস দেখানো, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল এবং যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে।

পরিবর্তনের হাওয়া
হাসিনার পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতা পূরণে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। তিনি সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান মনসুরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দেন এবং লুট হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, অন্তত ১১টি ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এগুলোতে নতুন বিনিয়োগকারীর খোঁজ চলছে। সরকার ইতোমধ্যে ২৯০ বিলিয়ন টাকা ঢেলে দিয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থাকে সচল রাখতে।

ডকুমেন্টারিতে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা, যেমন লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশতাক খান ও সাবেক বিচারপতিরা মনে করেন, লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারে “বছরের পর বছর” সময় লাগবে।

ডকুমেন্টারিতে আরও দেখানো হয়েছে, দুর্নীতি, জবাবদিহির অভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি কীভাবে ২০২৪ সালে জনঅসন্তোষের জন্ম দিয়েছে—বিশেষত ছাত্রদের মধ্যে। এতে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পুঁজি পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে ইউনূস সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ বাড়ছে। তিনি বলছেন, আগে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে হবে। আগামী নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল আকাশচুম্বী, তবে মৌলিক সংস্কার না হলে দেশ আবারও ক্ষমতার একচেটিয়া দখলে ফিরতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Admin News

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহীতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত

রাজশাহীতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত