গায়ত্রী-পুষ্করের পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্র 'বিক্রম-বেদা' দিয়ে ২০ বছর পর আবারও একসঙ্গে বড় পর্দায় ফিরেছেন বলিউড অভিনেতা হৃত্বিক রোশন ও সাইফ আলী খান। একই পরিচালকেরা ২০১৭ সালে তামিল চলচ্চিত্র 'বিক্রম-বেদা' নির্মাণ করেছিলেন যা ছিল সেসময়কার অন্যতম সুপারহিট ছবি। এবার সেটিরই রিমেক নিয়ে হাজির হয়েছেন বলিউডের দুই হার্টথ্রব অভিনেতা। ইতোমধ্যেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তুঙ্গে।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভারতে মুক্তি পেয়েছে বিক্রম বেদা।
একজন তুখোড় পুলিশ অফিসার বিক্রম (সাইফ আলী খান) দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার বেদাকে (হৃত্বিক রোশন) পাকড়াও করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। এদের দুজনের মধ্যে বেদা একজন অসাধারণ গল্প-কথক, যিনি নিজের কথার জালে বিক্রমকে আবদ্ধ করে ফেলেন এবং এক অন্ধকার জগতের গূঢ় রহস্যের মধ্যে টেনে নিয়ে যান।
ছবিটি প্রসঙ্গে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনকে হৃত্বিক বলেন, "২০ বছর হয়ে গেছে আমি সর্বশেষ সাইফের সাথে কাজ করেছি। 'বিক্রম বেদা'র জন্য আবারও তার সাথে কাজ করতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। তিনি এমন একজন সহ-শিল্পী যিনি আমাকে পর্দায় নিজের সেরাটা দিতে উৎসাহিত করেন। তার অভিনয় এত শক্তিশালী এবং বাস্তবধর্মী যে এটা পুরো দৃশ্যের ভাবভঙ্গিই বদলে দেয়। সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে তার সাথে আরও অভিনয় করার ইচ্ছা আছে আমার।"
অন্যদিকে, সাইফ আলী খান বলেন, "হৃত্বিক অভিনয়ের প্রতি খুবই নিবেদিতপ্রাণ একজন অভিনেতা। যেসব অভিনেতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে, হৃত্বিক তাদের মধ্যে একজন। আমি জানতাম যে আমাকে এখানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এবং নিজের ফিটনেসের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছে আমাকে এখানে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। আর সত্যি বলতে আমি কিছুটা ভয়েও ছিলাম যা আসলে আমার জন্য ভালোই হয়েছে।"
এর আগে ২০০২ সালে 'না তুম জানো না হাম' সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন হৃত্বিক-সাইফ। 'দিল চাহতা হ্যায়' (২০০১) দিয়ে সাইফ এবং 'কাহো না পেয়ার হ্যায়' (২০০০) এবং 'কাভি খুশি কাভি গাম' (২০০০) চলচ্চিত্রে প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করে হৃত্বিক বলিউডে দারুণ খ্যাতি পেয়েছিলেন।
সাইফ আলী খান বলেন, "না তুম জানো না হাম'-এর সেটে আমরা দুজন নিতান্তই কমবয়সী ছিলাম এবং তখন অতটা পাত্তাও দেইনি। আমার এখনো মনে আছে যে সালমান খান ছবির সেটে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'তুমি ওর (হৃত্বিক) সাথে কাজ করছো কেন? ও থাকলে তো পর্দায় তোমার উপস্থিতি বোঝাই যাবে না, কারণ ও এখন বলিউডের সবচেয়ে সুদর্শন অভিনেতা।' আর আমি উত্তর দিয়েছিলাম- এটা কোনো ব্যাপার না। আর সত্যিই সেটা কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।"
'লাভ আজকাল' অভিনেতা আরও বলেন, "আমি বরং এই সিনেমায় হৃত্বিকের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম।"
'কাল হো না হো'(২০০৩) এবং 'হাম তুম' (২০০৪) চলচ্চিত্রে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার পর ২০০৬ সালে 'ওমকারা'তে এসে ভোল পালটে ফেলেন সাইফ আলী খান। 'হাম তুম' ছবির জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিলেন সাইফ।
হৃত্বিক রোশন অভিনয় ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন কৃশ ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে। এছাড়া, 'যোধা আকবর' (২০০৮), 'জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা' (২০১১), 'অগ্নিপথ' (২০১২), 'ব্যাং ব্যাং' (২০১৪) এবং 'ওয়ার' (২০১৯) ইত্যাদি হৃত্বিক অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
ভেদা চরিত্রটি নিয়ে হৃত্বিক বলেন, "ভেদা চরিত্রটি নিয়ে আমার কাজ শুরু হয় তার নিজস্ব জগত তৈরি করা দিয়ে। আমি প্রথমে তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করার চেষ্টা করি, তার মতো করে কথা বলতে ও হাটতে শিখি, যেমনটা পরিচালকদ্বয় চেয়েছিলেন। ভেদার চরিত্র গঠন করা হয়ে গেলে আমরা তার মনোজগতের দিকে গুরুত্ব দেই। তার আবেগ, তার বিভিন্ন বিষয় প্রকাশের ভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করি। এটা এমন একটা যাত্রা ছিল যেখানে আমি অনেককিছু শিখেছি আবার অনেককিছু বাদও দিতে হয়েছে, কিন্তু বেদার চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে শেষ পর্যন্ত আমি খুবই খুশি।"
সাইফ আলী খান আরও বলেন, "এই ছবির চিত্রনাট্য অসাধারণ ও চাতুর্য্যের সাথে লেখা হয়েছে। আমি আসল সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখেছি। মাধবনের পারফরমেন্স দেখে তো আমি চমৎকৃত হয়েছি। সেই একই চরিত্র যখন আমার করতে হবে তখন সত্যি বলতে, আমি মনে করি না তার চেয়ে খুব আলাদা কিছু করবো আমি। অর্থাৎ, আমার মনে হয়েছে মাধবন যেভাবে অভিনয়টা করেছে সেটা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, সাংস্কৃতিক কিছু দিক ছাড়া আর কিছুই তেমন বদলাতে হবে না।"